• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘দাম এমন থাকলে আর পাট চাষ করব না’


পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৯:৩৮ পিএম
‘দাম এমন থাকলে আর পাট চাষ করব না’

পঞ্চগড়ে পাটের ভালো ফলন হলেও এবার কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে মলিন হয়ে গেছে কৃষকদের মুখের সোনালী হাসি। কষ্টের উৎপাদিত পাট বাজারে নিয়ে প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

জেলার শালবাহান হাট, ভজনপুর জগদলসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বাজরে পাটের মণ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অভাবের কারণের অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় কেউ কেউ ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। 

কৃষকরা জানান, কমপক্ষে পাটের দাম যদি ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে থাকে তাহলে উৎপাদন খরচ উঠে কিছুটা লাভবান হওয়া যায়। এবার সার, কীটনাশক, বীজের দাম ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাড়তি খরচ দিয়ে পাট চাষ করলেও কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। 

শালবাহান ইউনিয়নের দানাগছ এলাকার পাট চাষি রবিউল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এক বিঘার বেশি জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয়ে থাকে ৮-১০ মণ। সেখানে এক মণ পাটের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করে খরচের টাকাও উঠাতে পারছি না। বাজারে পাটের যে দাম আগামীতে এমন থাকলে পাট চাষ আর করা হবে না।”

শালবাহান হাটে পাট বিক্রি করতে আসা চাষি আইনুল হক বলেন, “বাজারে এক মণ পাট এনেছিলাম। এ বছর খরচের তুলনায় বাজারে পাটের দাম অনেক কম। ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করলাম। তারপরেও পাট ব্যবসায়ীরা দাম আরও কম বলছেন। বাজারে পাটের চাহিদা ও দাম কমে গেছে। আগামীতে বাজারে পাটের দাম এমন হলে আমরা পাট চাষ করা থেকে সরে আসব।”

ভজনপুর ইউনিয়নের পাট চাষি জয় শর্মা বলেন, “৫০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। পাট হয়েছিল ৯-১০ মণ। খরচ হয়েছিল ১৪-১৫ হাজার টাকা। যে লাভের আশায় পাট চাষ করেছিলাম, সেই লাভ আর হয়নি। সার-কীটনাশক, হাল, নিড়ানি, কাটানিতে চলে গেছে সব খরচ। এত খরচ করার পর প্রতি মণ পাট আমি ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এমন লস খেলে তো আর পাট আবাদ করতে পারব না। তাই সরকারের প্রতি আবেদন করছি, আমরা কৃষক, কষ্ট করে পাটের সোনালী আঁশ উৎপাদন করি কিন্তু দাম পাই না। বিষয়টি যেন সরকার একটু নজর দেন। প্রশাসনের উচিত পাটের বাজার মনিটরিং করা। তা নাহলে আমার মতো ক্ষুদ্র চাষিরা মারা যাবে।”

এদিকে পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পাটের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। এ কারণে তারা বাজার বুঝেই পাট কিনছেন।

আবু রায়হান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, “বাজারে পাটের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু কম। আমরা বিভিন্ন গ্রাম গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে ২২০০ থেকে ২২৫০ টাকা পর্যন্ত পাট কিনছি। পাটের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি বলে পাটের দাম কম। আমরা ছোট ব্যবসায়ী, আমাদের পুঁজি কম, যারা বড় ব্যবসায়ী আছেন তারা পাট মজুদ করে রাখেন।”

পাটের আড়তদার মাজেদুল ইসলাম বলেন, “আমরা বর্তমানে পাট ২ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনতেছি। মিলাররা যে সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছে, তারা আমাদের কাছ থেকে যে দামে পাট কিনছে, তাতে কিন্তু আমরা সেভাবে লাভবান হতে পারছি না। আমরা পাট কেনার পর যে দামে বিক্রি করি তাতে আমাদের মণ প্রতি ২০-৫০ টাকা লাভ করি। মূলত চাষিদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় তারা লাভবান হতে পারছে না। এভাবে পাটের দাম অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চাষিরা পাটের চাষে অনীহা প্রকাশ করবে। পাট উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকারকে এ শিল্পের ওপর অবশ্যই নজর দিতে হবে। নইলে বাংলাদেশ থেকে পাট আবাদ বিলীন হয়ে যেতে পারে।”  

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এ বছর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ বছর পাটের দ্বিগুন আবাদ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমরা চাষিদের সব ধরণের সুবিধা ও পরামর্শ দিয়েছি। চাষিদের উন্নত মানের পাটের বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। চাষিদের অভিযোগের কথা আমরা শুনেছি। তবে এ বছর পাটের আবাদ ভালো হয়েছে, পাটের মানও ভালো। লাভ না হয়ে লোকসান হতে পারে না। আশা করছি তারা পাটের দাম পাবেন।”

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রহিম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বিষয়টি গত মাসে উপস্থাপন হয়েছিল। জেলা প্রশাসক মহোদয় সবাইকে নিয়ে বসে এটার সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা তো সরাসরিভাবে পাটের মূল্য নির্ধারণ করতে পারি না। উপর মহল থেকে নির্দেশনা এলেই সেটি নিয়ে কাজ করা যাবে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পঞ্চগড় জেলার কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ আলম মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ৯ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। চাষিদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার-বীজ প্রণোদনাসহ বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কৃষিতে ফসল উৎপাদনে সরকার কৃষকদের সব ধরণের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। বাজারের পাটের সরবরাহ বেশি থাকায় হয়তো পাটের দাম কম যাচ্ছে। আশা করছি চাষিরা দাম পাবেন।

Link copied!