নির্বাচনে সাংবাদিকদের কাজের সুবিধায় মিডিয়ার অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আহসান হাবিব খান।
মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বরিশাল সিটি নির্বাচন-২০২৩ উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনে সাংবাদিকদের কাজের সুবিধায় নীতিমালাগুলোতে পরিবর্তন আনা হবে কিনা জানতে চাইলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমি সবসময় বলে এসেছি, মিডিয়া আমার চোখ, মিডিয়া আমার কান। যদি আমি চোখে পট্টি লাগিয়ে রাখি তাহলে মিডিয়া দেখবে কীভাবে, আর কানে তুলা ভরে রাখলে শুনবে কীভাবে। আমরা মিডিয়ার অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করব। কিন্তু যখন ভোটগ্রহণ করছে তখন কক্ষের মধ্যে লাইভ বা ইন্টারভিউ করলে ডিস্টার্ব হবে কিনা সেটা বিবেচনা করতে হবে আপনাদের। আপনারা কক্ষের ফুটেজ নিয়ে বাইরে গিয়ে সবকিছু দেখান, সেখানকার অনিয়মগুলোকে তুলে ধরুন কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ভোটকক্ষের মধ্যে এটা করা সমীচীন নয়।“
আহসান হাবিব খান আরও বলেন, “কেন্দ্রের ভেতরে যান প্রিজাইডিং অফিসারকে অবগত করুন। আমরা বলেছি কোনো কক্ষে দুই জনের বেশি একত্রে যেতে পারবেন না, দশ মিনিটের বেশি থাকতে পারবেন না। আপনারা সবাই একত্রে কক্ষের মধ্যে গেলে কি সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে? তাহলে আপনারা দুজন করে ঢুকেন, ফুটেজ নেন, বাইরে এসে লাইভ দেন কোনো অসুবিধা নেই।” কেন্দ্রে লাইভ করলে সমস্যা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ৭০০ নির্বাচন পরিচালনা করেছি, এরমধ্যে ৬ শতাধিক করেছি ইভিএমে। আমি সবসময় বলে আসছি, ইভিএম হচ্ছে সচ্ছতার প্রতীক, ইভিএম দিয়ে কেউ কিছু করতে পারে না। আর আমরাও সঠিকভাবে ইভিএম দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেছি।”
আহসান হাবিব বলেন, “ইভিএমে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ এবং উপনির্বাচনের সবগুলোতে আমি কাছ থেকে মনিটরিং করেছি। এটার সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে ভোটারকে হাতের ছাপ দিয়ে কেন্দ্রে যেতে হবে। আবার ইন্টারনেট কানেকশন না থাকায় কোনো কিছু ইভিএম দিয়ে করা সম্ভব নয়। ব্যালট লুট করলে একটা অনিয়ম হতে পারে, কিন্তু ইভিএম লুট করলেও ডেটা থেকে যায়। আমরা ইভিএমের ব্যাপারে কারিগরি বিশেষজ্ঞদের অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা খুলে সবকিছু দেখেছেন। আবার কিছু করা যায় কিনা, তা দেখতে আমরা ওপেনলি সব দলকে দেশ-বিদেশ থেকে এক্সপার্ট নিয়ে আসার জন্য বলেছি। তারপরও ইভিএম নিয়ে সন্দেহটা কেন, তা আমার বোধগম্য নয়। তারপরও আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, ইভিএম একটি সচ্ছতার প্রতীক। কারণ ইভিএমে আমরা যে ৬০০ নির্বাচন পরিচালনা করেছি, সেখান থেকে রেজাল্ট ভুলের কথা কেউ বলেননি, এমনকি একজনও আদালতের স্মরণাপণ্য হননি।”
সিটি নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, “একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও পক্ষপাতিত্বহীন একটা নির্বাচন করতে গেলে যা যা দরকার, সেই কাজগুলোই পরিকল্পিতভাবে ঐকমত্য হয়ে করবো। আপনাদের চোখে যদি ধরা পড়ে আমরা কেউ পক্ষপাতিত্ব করছি তাহলে জানান। গাজীপুরে আপনাদের ফুটেজ থেকে ওখানকার মেয়র প্রার্থীকে ডেকে এনেছি, নোয়াখালীকে একটা মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছি আপনাদের ফুঁটেজ দেখে। হ্যাঁ, আপনাদের মতামত বা কারও সঙ্গে সখ্য থাকতে পারে, তবে আপনারা সততার সঙ্গে ইমানের সঙ্গে সঠিক কাজটি করুন। সঠিক কাজের সঙ্গে আমিসহ সবাই আছেন।”
নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, “মোটরসাইকেল নিয়ে সাংবাদিকদের সব পক্ষ এবং সম্পাদকদের সঙ্গে বসে আমরা একটি সলিউশন বের করার চিন্তা করছি। এটাকে পলিটিক্যালি যাতে ব্যবহার না করা যায়, এর একটা ফুলস্টপ খোঁজার চেষ্টা করছি। আমরা অবশ্যই সুন্দর একটি সলিউশনে আসব।”
বরিশালসহ সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, “আমি গ্যারান্টি দিতে পারি এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে পৌঁছাবে এবং তাদের পৌঁছাতে যাতে বাধাগ্রস্ত হতে না হয় সেজন্য পুলিশসহ যারা যারা রয়েছে, তাদের সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপনারা সন্তুষ্ট হবেন এবং আপনাদের আশার চেয়েও বেশি ভোটার উপস্থিতি ঘটবে। আর আমরা সবগুলো সিটিকেই সমানভাবে দেখছি, যখন যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে তখন সেগুলো মোকাবিলা করব। এখনও কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না।”
বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অভিযোগগুলো রিটার্নিং অফিসারের কাছে আসবে, তবে সেরকম আসেনি। গতকাল একটি শোডাউন হয়েছে, যেটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই প্রার্থীকে যথাযথ পত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। প্রার্থী নিজে এসে তার জবাব দেবেন।”
সবশেষে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “শপথ নেওয়ার পর থেকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন উপহারের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইনশাল্লাহ আমরা সেটা করব।”