• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩০, ৩০ রজব ১৪৪৬

ক্রেতা সংকটে বন্দরে পড়ে আছে চালভর্তি শতাধিক ট্রাক


হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
ক্রেতা সংকটে বন্দরে পড়ে আছে চালভর্তি শতাধিক ট্রাক
হিলি স্থলবন্দরে বন্দরে চালবোঝাই ট্রাক। ছবি: সংগৃহীত

দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছেন আমদানিকারকরা। তবে আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও হিলি স্থলবন্দরে আসছেন না ক্রেতারা। এতে দেখা দিয়েছে ক্রেতা-সংকট। বন্দরের ভেতরে পড়ে আছে শতাধিক চালবোঝাই ট্রাক। বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকরা। এ অবস্থায় চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা কমিয়েছেন তারা।

আমদানিকারকরা বলছেন, সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং ওএমএসের মাধ্যমে খোলাবাজারে চাল বিক্রি করায় চাহিদা কমেছে। এজন্য ক্রেতার সংকট। আমদানি বাড়লেও ক্রেতা সংকটে চালবোঝাই ট্রাক খালাস করতে পারছেন না। ফলে চালবোঝাই শতাধিক ট্রাক বন্দরে পড়ে আছে।

আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে হঠাৎ করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠে চালের বাজার। তা নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। সেইসঙ্গে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় আমদানি শুল্ক। এরপর ১১ নভেম্বর থেকে হিলি দিয়ে শুরু হয় ভারত থেকে আমদানি।

প্রথম দিকে আমদানি কিছুটা কম হলেও দিনে দিনে বেড়েছে। গড়ে ৫০-৭০ ট্রাক আমদানি হয়েছে। আবার কোনোদিন ১০০ ট্রাক ছাড়িয়ে গেছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দেয় ক্রেতা সংকট। বিক্রি না হওয়ায় বন্দরের ভেতরে চালবোঝাই ট্রাকগুলো গত ১০-১২ ধরে পড়ে আছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় সরু চালের পাশাপাশি মাঝারি ও মোটা চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা করে কমেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) মোটা চাল স্বর্ণা ৫১ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা দুই দিন আগেও ৫৩ টাকা ছিল।

রত্না দুই টাকা কমে ৫৭, সরু চাল শম্পা কাটারি তিন টাকা কমে ৬৭, মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চালের কেজি দুই টাকা কমে ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবু ক্রেতা সংকট রয়ে গেছে।

বন্দর থেকে চাল কিনে মোকামে পাঠানো পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজার অস্থির হয়ে উঠলে আমদানি শুরু হয়। হিলি থেকে সেই চাল কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাই আমরা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় টিসিবির মাধ্যমে চাল বিক্রি শুরু হয়। সেইসঙ্গে ওএমএসের মাধ্যমে কম দামে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে সরকার।

ফলে বিভিন্ন মোকামে চাহিদা কমে যায়। ১০-১২ দিন আগেও যেসব মোকামে ছয়-সাত ট্রাক করে চাল পাঠাতাম এখন এক-দুই ট্রাক পাঠাচ্ছি। তারা বলছেন, চাহিদা কম। এজন্য নিতে চাচ্ছেন না। এদিকে আমদানি অব্যাহত থাকায় মজুত বেড়ে গেছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। ফলে সরু চালের পাশাপাশি মাঝারি ও মোটা চালের কেজিতে দুই-তিন টাকা কমেছে।’

আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু স্থলবন্দর দিয়ে নয়, বরং চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও জাহাজে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হচ্ছে। শুধু যে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে তাও নয়, বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি টিসিবি এবং ওএমএসের মাধ্যমে কম দামে চাল বিক্রি শুরু করেছে সরকার।

আবার কৃষকের ঘরে পর্যাপ্ত মজুত আছে। সবমিলিয়ে চাহিদা কমেছে। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, মোকাম থেকে অর্ডার পাচ্ছি না। সবাই বলছেন চাহিদা নেই। আমি যেসব মোকামে চাল দিতাম, তারাও এখন কম দামে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনছেন। আগে দিনে একেক মোকামে আট-১০ ট্রাক পাঠাতাম, এখন দুই ট্রাকও পাঠাতে পারছি না। কারণ ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন না।’

গত চার-পাঁচ দিনে চালের চাহিদা অর্ধেক কমেছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের আমদানিকারক মনির হোসেন।তিনি বলেন, ‌‘যারাই অনুমতি পেয়েছেন তারাই আমদানি করছেন। ফলে আগের তুলনায় সরবরাহ বেড়েছে। তবে সরবরাহ বাড়লেও ক্রেতা বাড়েনি বরং অর্ধেকে নেমেছে। আগে যেসব পাইকারি ব্যবসায়ী আসতেন এখন তারাও আসছেন না। এ অবস্থায় বিক্রি না হওয়ায় বন্দরের ভেতরে চালবোঝাই শতাধিক ট্রাক পড়ে আছে। এর মধ্যে ১০-১২ দিন এমনকি ১৫ আগে আসা চালের ট্রাকও আছে। বিক্রি না হওয়ায় ট্রাকগুলো থেকে চাল খালাস করতে পারছি না আমরা।’

এভাবে বন্দরে চাল পড়ে থাকলে লোকসান গুনতে হয় জানিয়ে মনির হোসেন আরও বলেন, ‘বন্দরে পড়ে থাকলে খরচ বাড়ে। ব্যাংকে সুদ বাড়ে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা। কেজিতে আমাদের লাভ হয় তিন-চার টাকা। অথচ এখন ক্রেতা সংকটের কারণে কেজিতে দুই-তিন টাকা করে কমে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

মোকামগুলোতে চালের ক্রেতা কমায় চাহিদা কমেছে বলে জানালেন বন্দরের আরেক আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম কিছুটা বাড়ায় মাঝে কিছুদিন আমদানি কিছুটা কমেছিল। ফলে দেশের বাজারে দামের ওপর প্রভাব পড়েছিল। বর্তমানে ডলারের দাম কমেছে। যে ডলার ১২৬ টাকায় উঠেছিল এখন তা ১২০ টাকায় নেমেছে। এতে চাল আমদানি বেড়েছে।

সরবরাহ বাড়ায় দাম এখন কমেছে। তবে মোকামগুলোতে ক্রেতা সংকট। এ অবস্থায় বন্দরের ভেতরে চালভর্তি শতাধিক ট্রাক আটকে আছে। ফলে কেজিতে দুই-তিন টাকা করে কমিয়ে চাল বিক্রি করছেন আমদানিকারকরা।’

হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছুটা কম হলেও দিনে দিনে বেড়েছে চাল আমদানি। গত ১১ নভেম্বর থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই হাজার ৬৯৪ ট্রাকে এক লাখ ৯ হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত চাল বন্দরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যাতে আমদানিকারকরা দ্রুত বাজারজাত করতে পারেন।’

Link copied!