যশোরে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ২টা নাগাদ যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটির আবহাওয়া অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ দিকে তীব্র তাপদাহের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। রোদের তাপে গলে যেতে শুরু করেছে শহরের বেশ কয়েকটি সড়কের পিচঢালাই। এদিকে, যশোরে লাগাতার তাপদাহের কারণে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
গত কয়েক দিন ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে যশোরের সাধারণ মানুষের জনজীবন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় শহরে লোকজনের উপস্থিতি কম হলেও শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে জিরিয়ে নিচ্ছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কিছু সময় পর পর হাতে মুখে পানি দিয়ে নিজেকে শীতল রাখার চেষ্টা করছেন।
রিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, “সকাল ৮টায় রিকশা নিয়ে বেরিয়েছি। রোদের দাপটে লোকজন বাইরে কম বের হচ্ছে। তাই আয় রোজগার কমেছে। প্রতিদিন রিকশা মালিককে আড়াইশ টাকা, নিজের দুপুরের খাবার, চা নাশতার খরচ মিলিয়ে আগে ৩৫০ টাকা আয় করতে হবে। এরপর সংসার খরচের জন্য যা হয়। কিন্তু এ গরমে সে আয়ও করতে পারছি না।”
শরিফুল আলম নামের এক ফেরিওয়ালা বলেন, “গরমে লোকজন বাইরে কম, তাই বেচাবিক্রি বেশি একটা হচ্ছে না। রাস্তায় ঘুরতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
এদিকে গরমের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ২৫ রোগী। যার মধ্যে ১১ জনই শিশু রোগী। বৃহস্পতিবার মোট রোগী ছিল ১১ জন। শুক্রবার নতুন করে (সকাল ১০টা পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন।
লাগাতার তাপপ্রবাহের কারণে রোদের মধ্যে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিচিত্র মল্লিক। তিনি বলেন, “এই গরমে ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথার রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি।”
যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, এ সময়ে ডায়েরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিট স্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করে। এ সময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। দিনমজুর বিশেষ করে কৃষকরা যেন বেলা ১১টার মধ্যে এবং বিকলে তাপমাত্রা কমলে কাজ করেন সেই পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, “যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। আজকের অবস্থাও সেদিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে আমরা দ্রুত কিছু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কতা বার্তা পৌঁছে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা প্রকাশ করেছি। লোকজন যেন এই রোদে ঘর থেকে বের না হয়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।”