ময়মনসিংহে মসজিদ বানিয়েছেন স্থানীয় একটি হিজড়া সম্প্রদায়। নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর কালীবাড়ী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সরকারি জমিতে তারা টিনশেডের এই মসজিদ গড়ে তুলেছেন।
মসজিদটির নাম দক্ষিণ চর কালীবাড়ী আশ্রয়ণ জামে মসজিদ। চলতি মাসে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। মসজিদটির জন্য বেশ কয়েকজন স্থানীয় হিজড়া নিজেদের সময়, শ্রম ও অর্থ দিয়েছেন।
সম্প্রতি জেলা শহরে নামাজ পড়তে গেলে সেখান থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়। এরপরই একটি বরাদ্দ পাওয়া সরকারি একটি জমিতে নিজেদের অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণ করেন তারা।
সম্প্রদায়ের নেতা জয়িতা তনু বলেন, “এখন থেকে কেউ হিজড়াদের মসজিদে নামাজ পড়ায় বাধা দিতে পারবে না। কেউ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে পারবে না।”
ছোট বেলায় কোরআন তেলাওয়াত করতে পারতেন, পড়েছেন মক্তবেও, পরবর্তীতে হিজড়া সম্প্রদায়ে যোগ দেওয়ায় জীবনে মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন এমন আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন ৪২ বছর বয়সী সোনিয়া। তিনি বলেন, “আমি স্বপ্নেও ভাবিনি, জীবদ্দশায় আবারও একটি মসজিদে নামাজ পড়তে পারব।”
স্থানীয় হিজড়া কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ বলেন, “দেশে এমন মসজিদ এই প্রথম। আগেও একটি শহরে মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে স্থানীয়দের প্রতিবাদে তা আর হয়ে ওঠেনি।”
মসজিদটির ইমাম আব্দুল মোতালেব (৬৫) বলেন, “অন্য মানুষের মতো তারাও আল্লাহর সৃষ্টি। কারও সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ ধর্মে নেই। আমরা সবাই মানুষ। কেউ পুরুষ, কেউ নারী, কিন্তু সবাই মানুষ। কুরআন আল্লাহ সবার জন্যই নাজিল করেছেন। তাই প্রত্যেকেরই প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে। কেউ কাউকে অস্বীকার করতে পারে না “
মোতালেব আরও বলেন, “হিজড়াদের এই বিশ্বাস অন্যদের জন্য শিক্ষনীয় হতে পারে। আমি যতদিন হলো এ মসজিদে আছি, তাদের চরিত্র ও কর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছি।”
মসজিদটিতে হিজড়াদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকেই নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। তোফাজ্জল হোসেন নামের এক মুসল্লি জানান, হিজড়াদের সম্পর্কে তার একটি ভ্রান্তধারণা ছিল। তাদের সঙ্গে ওঠাবসার মাধ্যমে সেটি দূর হয়ে গেছে।
তোফাজ্জল বলেন, “প্রথম দিকে তারা যখন আমাদের সঙ্গে থাকতে শুরু করলেন, তখন অনেকে অনেক কথাই বলতেন। কিন্তু আমরা পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে মানুষ যা বলছে তা সঠিক নয়। তারাও অন্য মুসলমানের মতো সৎ জীবনযাপন করেন।”