• ঢাকা
  • বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৮ শা'বান ১৪৪৬

ছিনতাইয়ের হটস্পট কক্সবাজার, বিপাকে পর্যটক ও স্থানীয়রা


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম
ছিনতাইয়ের হটস্পট কক্সবাজার, বিপাকে পর্যটক ও স্থানীয়রা

ছিনতাইয়ের হটস্পটে পরিনত হয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। প্রতিদিন শহরের কোথাও না কোথাও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন পর্যটক ও স্থানীয়রা। রাত অথবা দিন সমানভাবে চলে ছিনতাই। শহরে অব্যাহত ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পর্যটক ও স্থানীয়দের  মাঝে। শহরের অন্তত ৩০ এর অধিক স্থানে ছিনতাইকারীদের অপ্রতিরোধ্য দৌরাত্ম্য রয়েছে।

ছিনতাই চক্রের কবলে পড়ে পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন হারাচ্ছে মোবাইল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। এছাড়া তাদের হাতে থাকা ধারাল অস্ত্র ও ছুরির আঘাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।

কক্সবাজার সদর থানা সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১১৬ জন ছিনতাইকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৩২ জনের বিরুদ্ধে।

তথ্যমতে- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী ও লাবনী পয়েন্ট ছিনতাইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়াও শহরের বাস টার্মিনাল, লারপাড়া, লিংক রোড, বিজিবি ক্যাম্প, কবিতা চত্বর, লালদিঘিপাড়, খুরুশকুল রাস্তার মাথা, গোলদিঘিপাড় ও বাজারঘাটাসহ অন্তত ৩০ স্পটে প্রতিদিন শতশত ছিনতাইকারী দাপিয়ে বেড়ায়।

গত ১৬ জানুয়ারি সকালে গোলদিঘি পাড়ে অমিতা নাথ নামের একজন নার্সের গলা থেকে চেইন ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী।

ভুক্তভোগী বলেন, “এক যুবক হঠাৎ আমার গলা থেকে চেইন টান দিয়ে নিয়ে যায়। দিনে দুপুরে ওপেন জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় প্রকাশ্যে এ ঘটনা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।“

লিংক রোড এলাকার সাইফুল ইসলাম নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, “কিছুদিন আগে সিএনজিচালিত অটোরিকেশা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় দুজন যুবক পেছনে অস্ত্র ও ছুরি ধরে আমার দুটি মোবাইল ফোন ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের কথামতো জিনিসপত্র না দিলে মারধর এমনকি হত্যাও করতে পারে।”

আরেকজন ভুক্তভোগী তাফহীমুল আনাম তোহফা বলেন, “অফিস শেষ করে অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম, মোবাইলে কল আসায় বের করে কথা বলার সময় পেছন দিক দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক আমার মোবাইল টান দেয়। মোবাইল হাতে শক্ত অবস্থায় থাকায় নিতে পারেনি।”  

ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা সমির মল্লিক বলেন, “কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন শহরে নিয়মিত ছিনতাই হয়, এটা খুবই উদ্বেগজনক বিষয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমার সামনে দুজন পর্যটকের মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় কয়েকজন যুবক। ঘটনার সময় পথচারীরা এগিয়ে এলে ছিনতাইকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। প্রতিকার না পাওয়া এবং পুলিশের হয়রানির অভিযোগ তুলে অনেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত করছেন না।

ছিনতাই ছাড়াও কক্সবাজারে বেড়েছে অস্ত্রধারীদের দাপট, খুন ও অপহরণের পাশাপাশি দখল, চাঁদাবাজি, হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের মতো গুরুতর অপরাধ। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনায় অপরাধীদের রক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় পর্যটন খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ বলছে, ৫ আগস্টের পর থেকে শহরের বিভিন্ন স্পটে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলেছে। গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারছে না। এখন পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো হয়েছে।

এ বিষয়ে রায়হাতুল গীর কসবা নামের এক আইনজীবী বলেন, “একজন ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর অল্প কিছুদিনের মধ্যে জামিন নিয়ে বের হয়ে আসছে। কারাগার থেকে আসার পর সে আরও বেশি ছিনতাই করছে। ছিনতাই প্রতিরোধে আমাদের প্রচলিত আইন সংশোধন করে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। ব্রিটিশ আমলে তৈরিকৃত ১৮৬০ সালের আইন ২০২৫ সালে এসে তেমন কাজেই আসছে না।“

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জানান, গত ৬-৭ মাস ধরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ছিনতাই। ছিনতাই চক্রের দৌরাত্ম্যে কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিস্ক্রিয়তা, পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা ও সড়কে লাইটিংয়ের অভাব।

তিনি আরও জানান, কক্সবাজার বিশ্বের কাছে অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত। ছিনতাই ও অপহরণের মতো বিষয় কক্সবাজারের পর্যটন খাতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, “গত ১০ দিনে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ১৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নষ্ট হওয়া সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো মেরামতের কাজ চলছে। যেসব স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই সেখানে ক্যামেরা ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” এসব বিষয়গুলো সমাধান হলে দ্রুতই ছিনতাই রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!