মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এখন তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। একের পর এক ভারী গোলা ও মর্টার শেল উড়ে এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড। ফলে আতঙ্ক আর শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। এরই মধ্যে সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশিসহ ২ জন নিহত হয়েছেন।
থাইল্যান্ড থেকে পরিচালিত মিয়ানমার ভিত্তিক গণমাধ্যম ইরামতি নিউজের বরাতে জানা যায়, আরাকান আর্মিদের দাবি করেছে, তারা তুমব্রু রাইট পিলার ক্যাম্প দখলে নিয়েছে। বাকিটাও শিগগিরই দখলে নেবে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্প দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি। তবে সে ক্যাম্পে অবস্থান নেওয়া জান্তা বাহিনী ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশও (বিজিপি) ক্যাম্প রক্ষায় পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। আরাকান বাহিনীর ওপর লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার যোগে গুলি এবং বোমা নিক্ষেপ করছে।
সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হাকিম (৪৮)। পেশায় একজন কৃষক। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু পশ্চিমকুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ভোর ৪টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গুলি আর মর্টার শেলের শব্দে নির্ঘুম রাত কাটে হাকিমের পরিবারের।
তিনি বলেন, “রোববার ভোর থেকে শুরু হয় মিয়ানমার জান্তা ও আরাকান আর্মির সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ। ব্যাপক গুলাগুলির শব্দ ভেসে আসছিলো। যার কারণে শিশু, নারীসহ মানুষজন আতংকিত হয়ে পড়ে। কখন গুলি থামবে আমরা তাও জানি না। হেলিকপ্টারে হামলা চালাতেও দেখা যাচ্ছে। কখন থামবে এ যুদ্ধ কে জানে। বাড়ি-ঘড় ছেড়েছে অনেকে।”
পশ্চিমকুলের আরেকজন আবছার বলেন, “সড়কে গাড়ি চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গুলির শব্দে ভেসে আসছে। থেমে থেমে ভেসে আসে মর্টার শেলের শব্দ। বাজার, দোকানপাট সব বন্ধ। সীমান্ত লাগোয়া আমাদের মতো অনেকে পালিয়ে এসেছে।”
অন্যদের মতো ইসলাম খাতুনও বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন তুমব্রুর উত্তরকুলে। তিনি বলেন, “গুলির শব্দে দিক-বেদিক ছুটেছি। নাতি-নাতনি সবাইকে নিয়ে বোনের বাসায় অবস্থান নিয়েছি। ভয়ে অনেকে পালাচ্ছে। সরকার তো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের উদ্যোগ থাকলে অন্তত নিরাপদে যেতে পারতাম।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে এপারের একাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘর।
গোলাগুলি ও সংঘর্ষে প্রাণহানির শঙ্কায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের এখন পর্যন্ত ৯৫ জন সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের ঘুমধুম বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি জানান, মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্ত আইন অনুযায়ী যা করণীয় তা করার প্রক্রিয়া চলছে।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, সীমান্ত পথে আরও বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওপর মহলে জানিয়েছি, যেন কিছু মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।”