• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ


জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৯:০৭ পিএম
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে  নিকড়দিঘী নান্দুলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়ম করে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক  কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের জমি, পুকুর, ও অন্যান্য খাত থেকে আয় আসে। প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা না  দিয়ে সভাপতির সাথে যোগসাজশ করে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন। 

জেলার নিকড়দিঘী নান্দুলা উচ্চ বিদ্যালয়টির ৬.৭৮ একর পুকুর ও ১০ একর ধানী  জমি  লিজ বাবদ ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আয় হয়েছে ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জমি থেকে আয় ৩০ লাখ টাকা, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দিঘী পুকুর থেকে আয় ৮৫ লাখ ৯১ হাজার এবং বিবিধ থেকে আয় আয় ৫ লাখ টাকা এই মিলে প্রায় ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার  টাকা আয় হয়,  এ টাকা প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের তহবিলে ব্যাংকে জমা করেননি। তিনি এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় আলোচনা না করে শুধু সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশ করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের যথেষ্ট আয় থাকা সত্বেও ৪৫ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন।

বিদ্যালয়ের স্কাউট করে এমন শিক্ষার্থী নাছিম মাহমুদ নিরব বলেন, “আমাদের স্কাউট ফান্ডে টাকা জমা আছে। কিন্তু আমরা কোনো প্রোগ্রামে টাকা চাইলে তিনি (প্রধান শিক্ষক) দেন না।”

আখতারুল ইসলাম মাসুদ, মেহেদী হাসানসহ একাধিক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের জমি থেকে কোটি টাকার আয় হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশ করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে জানান তারা।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাও. মোহাম্মদ সাফিউল্লাহ জানান, পুকুর লিজের ৪১ লাখ টাকার মধ্যে ১২ লাখ বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হয়েছে। এরপরও দেড় বছর লিজ ছাড়ায় পুকুর চাষাবাদ করেছে প্রভাবশালীরা। অথচ পুকুরের ৬ লাখ টাকা খাজনা ও বিদ্যালয়ের ৪৫ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান জানান,  কখনো কোনো সভায় বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসেব দিতেন না প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া তিনি অভ্যন্তরীন কোনো অডিট করতে দিতেন না। ব্যাংকের কোনো হিসাব তিনি কাউকে জানাতেন না। কেউ কিছু বললে সভাপতি এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর ভয় দেখাতেন।

বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মিনহাজ টিটু জানান, প্রধান  শিক্ষক তার ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের কারণে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেন। তিনি স্কুলে আসেন না, ফলে বিদ্যালয়ের নানা ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সভাপতিও কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেননি। এইভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করা শিক্ষকদের পক্ষে সমস্যা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন বলেন, “জোরপূর্বকভাবে আমাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এসব আওয়ামী লীগের আগ্রাসনের কারণে হয়েছে, তারাই এসব ভোগদখল করেছে। এখন আমার ওপর চাপ আসছে। গত ৫ আগস্টে সরকার পতনের আগে তো কেউ কিছু বলেনি। আগে তো আমি জবাই করা গরুর মত ছটপট করেছি”।

পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি আরিফা সুলতানা বলেন, “প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Link copied!