নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে মানুষের বসতভিটা। কেউ বসতবাড়ি হারিয়েছেন ৯ বার কেউবা ১০ বার।
রোববার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে ভিটেমাটি রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভাঙনকবলিত এলাকাবাসী।
মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে তারা কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে ভিটেমাটি রক্ষায় শেষ আকুতি জানিয়েছেন।
এ সময় ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, নদী ভাঙনরোধ চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই, ভাঙনরোধে ব্লক চাই’, ‘আশ্বাস নয় বাস্তবায়ন চাই, নদী ভাঙনরোধ চাই’, সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয় ভাঙনকবলিত এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাজারও মানুষ হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের চতলারখাল এলাকায় কাফনের কাপড় পরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সামনে কাফনের কাপড় পরিহিত পাঁচজন শুয়ে আছেন। কেউ অঝোরে বিলাপ করছেন কেউবা দাঁড়িয়ে থেকে অঝোরে কাঁদছেন।
মানববন্ধনকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাতিয়ায় মেঘনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে মাইলের পর মাইল এলাকার বাড়িঘর, দোকানপাট, কৃষিজমি বিলীন হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি ভাঙনকবলিত এলাকা রক্ষা করা না হয় তাহলে নদীগর্ভে সব বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়া সর্ববৃহৎ চেয়ারম্যান ঘাটের মাছঘাটও নদীগর্ভে বিলীনের পথে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত ব্লক, জিও ব্যাগ ফেলে স্থায়ী ব্যবস্থাগ্রহণের পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সাহাব উদ্দিন কিরন বলেন, “মাইলের পর মাইল মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। আত্মীয় স্বজনদের কবরস্থানও গিলে খেয়েছে সর্বনাশা মেঘনা। আমরা জীবিত থাকলেও আসলে মৃত। তাই কাফনের কাপড় পরে শেষ দাবি জানাচ্ছি। ড. ইউনুস স্যার যদি আমাদের রক্ষা করতেন তাহলে আমরা নামাজ পড়ে ওনার জন্য দোয়া করতাম। তিনি ছাড়া আমাদের আর উপায় নাই।”
বিবি রহিমা নামের এক বাসিন্দা বলেন, “৯ বার ভেঙে আমরা পথের ফকির হয়ে গেছি। বর্তমানে মানুষের জায়গায় থাকছি। স্বামী সন্তান, বাবা-মায়ের কবর পর্যন্ত রক্ষা করতে পারি নাই।”
চেয়ারম্যান ঘাটের মাছঘাটের ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন বলেন, “ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান ঘাটের মাছঘাট নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এই মাছঘাটের সাথে পুরো অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য জড়িত। আশপাশের মনপুরা, ভোলাসহ দ্বীপ জেলা, উপজেলায় নদী ভাঙনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যবস্থা নিলেও হাতিয়ায় তেমন কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়। আমরা চাই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই যেন রক্ষা করা হয়।”