• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাম-সাধুর মেলায় পাঁচ দিনে অর্ধ কোটি টাকার মুড়ি-মুড়কি বিক্রি


শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম
রাম-সাধুর মেলায় পাঁচ দিনে অর্ধ কোটি টাকার মুড়ি-মুড়কি বিক্রি

হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত রাম-সাধুর মেলায় প্রতি বছর পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের ঢল নামে। মেলার সময় পূণ্য লাভের আশায় দেশ বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এখানে এক সপ্তাহের অধিক সময় অবস্থান করে কীর্তন শোনেন। রাম-সাধুর এই মেলাকে কেন্দ্র করে হরেক রকম মুখরোচক খাবারের দোকান বসে। এর মধ্যে অন্যতম মুড়ি, মুড়কীর দোকান। এসব দোকানে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি মুড়ি, মুড়কী-মুরলী বিক্রি হয়।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের রাম ঠাকুরের বাড়িতে শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ সেবা মন্দির কমিটির উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

মেলা উপলক্ষে বসা অস্থায়ী দোকান ও মন্দির কমিটি সূত্রে জানা যায়, রাম-সাধুর আশ্রমটি শত বছরের পুরোনো। আশ্রমটি গোলক চন্দ্র সার্বভৌম ও শ্রীযুক্ত কালি কিশোর স্মৃতি রত্ন মহাশয়ের বাসস্থান। প্রতি বছর শীতের শেষে এই আশ্রমকে কেন্দ্র করে তিন দিনের মেলা বসে। মেলাকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মানুষের ঢল নামে।

মেলায় মুড়ি-মুড়কি তথা মুরলী, মনেক্কা, নিমকি, বাতাসার দোকান বসেছে ১৯ টির মতো। ময়দা, চিনি ও গুড় দিয়ে তৈরি মুখরোচক মুরলী, লালু বুলু, নিমকি, মনেক্কা, নকুল, কদমা, বাতাসা কেনেন দর্শনার্থীসহ পূণ্যার্থীরা। মেলার তিন দিনসহ আগে পরে মিলিয়ে পাঁচ দিনে অস্থায়ী এসব দোকানের প্রতিটি দোকানে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। সবগুলো দোকান মিলিয়ে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি বিক্রি হয় এই মেলায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি কেজি মুরলী, লালু বুলু, নিমকি, মনেক্কা তৈরিতে খরচ হয় ১২০ টাকা। অন্যদিকে নকুল, কদমা, বাতাসা তৈরিতে খরচ হয় ২২০ টাকা। সব মিলিয়ে এসব দোকানে পাঁচ দিনে মুখরোচক খাবার বিক্রি হয় ৫০ লাখ টাকার বেশি। অস্থায়ী এসব দোকানীদের কোনো ভাড়া দিতে হয় না মন্দির কর্তৃপক্ষকে। যার ফলে ছোট বড় সব দোকানীরাই এখানে দোকান বসান।

মেলায় মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসেছে পিংকি মণ্ডল (১৪)। সংবাদ প্রকাশকে পিংকি বলে, “ছোট বেলা থেকে আমি মায়ের সঙ্গে রাম-সাধুর মেলায় আসি। এখানে এসে নাম কীর্তন শুনি। বাড়িতে যাওয়ার সময় মন্দিরের প্রসাদ নিয়ে যাই। এছাড়াও মুরলী ও লালু বুলু আমার খুব পছন্দ। তাই মায়ের কাছে বায়না করলে আমাকে মুরলী ও লালু বুলু কিনে দেন।”

অথৈ দাস একজন গৃহবধূ। গোসাইরহাট থেকে রাম-সাধুর মেলায় এসেছেন তিনি। মুড়ি-মুড়কির দোকানে সংবাদ প্রকাশের কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, “ছোট বেলায় যখন স্কুলে পড়তাম, তখন থেকে নিমকি, গজা, মনেক্কা আমার পছন্দের খাবার। তাছাড়া রাম ঠাকুরের বাড়িটি আমার গুরুদেবের বাড়ি। ছোট বেলা থেকে এই মেলায় এসে আমি মুখরোচক মুরলী, মনেক্কা কিনে খেতাম। শৈশবের স্মৃতি এসব মুখরোচক খাবার কিনলাম বাড়িতে ছোটদের জন্য নেব, আমিও খাব।”

আবুল হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “রাম-ঠাকুরের মেলায় হিন্দু মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষও আসেন। মেলায় এসে মুখরোচক খাবার কিনে খায় অনেকে। আমিও বাতাসা, মুরলী, নকুলদানা কিনলাম। বাড়ির ছোট-বড় সকলেই এসব খাবার খুব পছন্দ করেন।”

সুশান্ত দেবনাথ এসেছেন ভারতের কলকাতা থেকে। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে রাম-সাধুর এই মেলায় আসেন পূণ্যের আশায়। মেলার শেষ দিনে এক থেকে দুই হাজার টাকার মুড়ি-মুড়কি কেনেন বাড়িতে নেওয়ার জন্য। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি এসব মুখরোচক খাবার আপনার বৌদিসহ বাড়ির ছোট বড় সবারই খুব পছন্দের। মেলার শেষ দিন বলে আজ মুরলী, লালু বুলু, নিমকি, মনেক্কা, নকুল, বাতাসাসহ প্রায় সব ধরনের মুখরোচক খাবার কিনলাম। মেলা শেষ হওয়ার একদিন পর কলকাতার উদ্দেশে রওনা হব। এসব মুখরোচক খাবার দেখলে সবাই খুশি হবে।”

তনু স্টোরের মালিক রতন দে বলেন, “মুরলী, লালু বুলু, নিমকি, মনেক্কা, বাতাসা নিজের হাতে তৈরি করি আমি। রাম-সাধুর এই মেলায় আমাদের থেকে কোনো ভাড়া নেওয়া হয় না। এখানে বিক্রিও বেশ ভালো। পাঁচ দিনে আমার আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে।”

রাজন মাদবর নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “বাঙালি ভোজনরসিক জাতি। মুখরোচক এসব খাবার খেতে তাদের জুড়ি নেই। মেলায় প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করব। এতে আমার ১ লাখ টাকার মতো ব্যবসা হবে। বেশ ভালোই চলছে বিক্রি।”

আধি মাম্পি স্টোরের মালিক চিত্তরঞ্জন দে সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার দাদাকেও দেখেছি এসব খাবার তৈরি করতে। তিন-চার পুরুষের ঐত্যিহ্য পারিবারিকভাবে ধরে রেখেছি। আমার পরে আমার ছেলেও এসব তৈরি শিখেছে। রাম-সাধুর মেলার দর্শনার্থীরা মুখরোচক এসব খাবার বেশি ক্রয় করেন। আমাদের ব্যবসাও অনেক ভালো হয়।”

শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ সেবা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মুকুল চন্দ্র রায় বলেন, “রাম-সাধুর মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা মুখরোচক খাবারের দোকান বসায়। এসব দোকানে লাখ লাখ টাকার খাবার বিক্রি হয়। মন্দির কমিটি বা কেউ তাদের থেকে দোকান ভাড়া নেয় না। তবে মেলা শেষে এসব ব্যবসায়ীদের অনেকেই মন্দিরে অর্থ দান করেন।”

Link copied!