মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীর আধা ঘণ্টার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ১২পরিবার। একই সঙ্গে ভাঙনে ধসে পড়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্তদের।
উপজেলার ধুলসুড়া ইউনিয়নের আবিধারা ও ইসলামপুর এলাকায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণেই আকস্মিক এই ভাঙন শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৪৬ নম্বর চর মকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের সিঁড়ি ও দুটি কক্ষ পদ্মায় ধসে পড়েছে। যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে বাকি অংশ। বিদ্যালয়ের আশপাশের অনেক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
ধুলসুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ খান বলেন, সোমবার রাতে হঠাৎ করেই ওই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে নদীতে বিলীন হয় ১২টি ঘরবাড়ি। সঙ্গে ধান, চাল, ভুট্টাসহ অন্য মালামালও গেছে। নদীতে ধসে পড়েছে চর মকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের একাংশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এখনো ভাঙন ঝুঁকিতে আছে বহু মানুষ।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেখা বেগম জানান, ঘটনার কিছু সময় আগে নদীপাড়ে বসে গল্প করছিলেন তারা। হঠাৎ ফাটল দেখতে পান। মুহূর্তের মধ্যেই ভাঙন শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একে একে বিলীন হতে থাকে ঘর-বাড়ি। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন ডাকা হয়। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় কয়েকটি ঘর সরানো সম্ভব হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বলাই দত্ত বলেন, “ঘরের চাল ও বেড়া খুলে রাস্তায় রাখা হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন কোথায় আশ্রয় নেব জানি না।”
বিমল নামের আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জানান, স্কুলের পাশেই তার বাড়ি ছিল। অর্ধেক ভিটা নদীতে চলে গেছে। বাকি অংশের ঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। যেকোনো সময় আবারও ভাঙন শুরু হতে পারে। তাই যা আছে তা নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন পদ্মার ভাঙনের কারণে বাপ-দাদার ভিটা ছাড়তে হলো।
হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় দোহার নবাবগঞ্জের একটি চক্র কয়েক বছর ধরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে। অপরিকল্পিত এ ড্রেজিংয়ের কারণেই হঠাৎ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন সবাইকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদী ভাঙন আরও ভয়াবহ হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ নদী ভাঙনে ৪৬ নম্বর চর মকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের আংশিক ধসে গেছে। নদীর কাছাকাছি থাকায় আগে থেকেই সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক কম ছিল। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় এ জন্য পাশের একটি সরকারি স্কুলে তাদের সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়টি উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে অন্যত্র স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান বলেন, নদীভাঙনের খবর পেয়েই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু হয়। আপদকালে ১২০০ মিটার এলাকায় এ কাজ চলছে। তিনি আশা করেন এতে ভাঙনরোধ হবে।