• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজে হাবিবের বাজিমাত


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০৩:০১ পিএম
চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজে হাবিবের বাজিমাত

টাঙ্গাইলের সখীপুরে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছেন হাবিব খান নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। তার বাড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কালিয়ানপাড়া গ্রামে।

হাবিব বাড়ির পাশে ১২ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন কৃষি বাগান। নাম দিয়েছেন সমন্বিত ‘খান এগ্রো’ কৃষি বাগান। সবাইকে তাক লাগিয়ে লালমাটিতে তিনি চাষ করছেন ফিলিপাইনের কালো আখ, টপ লেডি পেঁপে ও রঙিন সাগর কলা। এছাড়া এবার পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি সজিনা। এতে চাকরি ছেড়ে আসা হাবিব খান বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, আখগুলো দেশীয় প্রজাতির আখের তুলনায় বেশি লম্বা। গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুরো। ২-৩ মাসের মধ্যেই আখগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। বাগানের চলাচলের রাস্তার দুই ধারে লাগানো ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ এখন তার বাগানে শোভা পাচ্ছে। আখ লম্বায় বড় হওয়ায় যেন ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁশ, সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে আটকে রাখা হয়েছে।

অনিক নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, “হাবিব খান পেঁপেঁ, কলা, সজিনা ও আখ চাষ করছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি হাবিব খানের সঙ্গে আখ চাষ করেছি। আখের ভালো ফল হয়েছে। দামও ভালো পাব। আমার মতো ছাত্ররা যদি কৃষি কাজে লেগে পড়ে তাহলে কেউ আর এ দেশে বেকার থাকবে না।”

হাবিব খানের বাগানের শ্রমিক সবুজ ও রাজা মিয়া বলেন, “হাবিব খান চাকরি ছেড়ে কৃষি কাজ করছে। বাগানে ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আমরা আনন্দের সঙ্গে তার এখানে কাজ করছি। অনেকে তার এই উদ্যোগ দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।”

বাগানের মালিক হাবিব খান বলেন, “২০১৭ সালে এমবিএ শেষ করে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। সেখানে পাঁচ বছর চাকরি করার পর আর ভালো লাগছিল না। আমি যেহেতু কৃষকের সন্তান তাই কৃষিতে চিন্তা-ভাবনা করে ২০২২ সালে চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজে যুক্ত হই। বাড়িতে ফিরে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ ও ইউটিউব ঘেঁটে ২০২৩ সালে ফিলিপাইন জাতের উচ্চফলনশীল কালো আখ চাষ শুরু করি। এই আখটা খেতে অনেক সুস্বাদু ও বাজারে এর চাহিদা আনেক বেশি।”

তিনি বলেন, “চলতি মৌসুমে দেড় একর জমিতে ফিলিপাইনের কালো জাতের আখের (ব্ল্যাক সুগার-কেইন) ১০ হাজার চারা রোপণ করেছি। প্রতি চারায় চারটি করে আখ হলেও ৪০ হাজার আখ বিক্রি করা যাবে। এতে গত ছয় মাসে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। আগামী দুই মাসে আরও দেড় লাখ টাকা খরচ হবে। আখ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টাকা।”

হাবিব খান আরও বলেন, “সাড়ে ৩ একর জমিতে ৩ হাজার রঙিন সাগর কলা চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ লাখ। টপ লেডি জাতের উচ্চফলনশীন পেঁপে ১ একর জমিতে ১০০০ হাজার চারা রোপন করেছি। গত বছরও আমি ২ হাজার পেঁপে গাছ আবাদ করে উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ করেছিলাম। এ বছর পেঁপেতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। এর বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। আগামী বছরগুলোতে লাভ দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি। পরবর্তীতে এর পরিধি আরও বাড়ানো হবে।”

এ ব্যাপারে গজারিয়া ইউনিয়নের কৃষি ব্লক সুপারভাইজার সালেহ আকরাম বলেন, “তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাবিব খান তার সমন্বিত কৃষিভিত্তিক বাগানে বিভিন্ন ধরনের লাভজনক ফসল উৎপাদন করছেন। বিভিন্ন সময় তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমি তার এই উদ্যোগের সফলতা কামনা করি।”

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, “হাবিব খান পেঁপেঁ, কলা, সজিনা, আখের বাগান গড়ে তুলেছেন। এগুলো অনেক লাভজনক ফসল। এখান থেকে হাবিব খান বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। তরুণ ও শিক্ষিত যুবকরা কৃষির দিকে ঝুঁকছেন, আমরা তাদের স্বাগত জানাই। দেশের কৃষির জন্য এটি ভালো উদ্যোগ।”

Link copied!