• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রেমিকার আপত্তিকর ভিডিও বন্ধুর মোবাইলে, অতঃপর…


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম
প্রেমিকার আপত্তিকর ভিডিও বন্ধুর মোবাইলে, অতঃপর…

প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও বন্ধুর মোবাইলে জমা রেখেছিলেন শাহেদ হোসেন (৩০)। পরে সেই ছবি ও ভিডিও ফেরত চাইতে দিতে আপত্তি জানান বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০)। এরপর তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহেদ। এক লাখ টাকায় ‘কিলার’ ভাড়া করে হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা হয়। হত্যার পর রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয় মামুনের মরদেহ।

বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেমিক শাহেদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার এর উপঅধিনায়ক মেজর শরিফুল আহসান।

এর আগে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে শহরতলীর লিংকরোড এলাকা থেকে প্রেমিক শাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার শাহেদ ঈদগাঁওয়ের মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মো. মতিউর রহমানের ছেলে। তবে, তিনি কক্সবাজার পৌরসভার ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় বাস করতেন।

র‌্যাব জানায়, সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন একজন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায়ী। লিংক রোড এলাকায় যৌথভাবে পরিচালিত ভিশন ইলেক্ট্রনিক্সসামগ্রী বিক্রয়ের একটি শো-রুম রয়েছে। শো-রুমটি মামুন তার বন্ধু শাহেদ ও শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের শেয়ারের ভিত্তিতে পরিচালনা করে আসছিলেন।

কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ের একটি মেয়ের সঙ্গে ঘাতক শাহেদ হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালে তারা দুজনই কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শাহেদের মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের অবনতি হলে শাহেদের মোবাইলে থাকা তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করতে বলেন প্রেমিকা।

নিজের মোবাইল থেকে ডিলিট করার আগে, শাহেদ ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের মোবাইলে সংরক্ষণ করতে প্রেরণ করেন। পরে প্রেমিকার সামনে শাহেদ তার মোবাইল থেকে ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করেন। এরপর সেই ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের কাছ থেকে ফেরত চান শাহেদ। কিন্তু এসব ছবি ও ভিডিও শাহেদকে দিতে অস্বীকৃতি জানান মামুন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে মামুনকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে এক জায়গায় যেতে হবে উল্লেখ করে ভিশন শো-রুম থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাহারছড়া বাজারে আসতে বলেন। শাহেদের কথায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামুন বাহারছড়া বাজারে পৌঁছলে দুজনই মোটরসাইকেলে করে ঈদগাঁও কালিরছড়া বাজারের একটু আগে শাহেদ বন্ধু মামুনকে মোটরসাইকেল থামাতে বলেন। মোটরসাইকেল থামানোর পরপরই ঈদগাঁওর শীর্ষ ডাকাত মাছুয়াখালীর আলী আহমদ ওরফে চুনতি মৌলভীর ছেলে শাহীন ওরফে লালুর নেতৃত্বে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মামুনের মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে শাহেদকে বুঝিয়ে দেয়। এসময় তাদের এক লাখ টাকা প্রদান করে শাহেদ।

পরে মামুনের মোবাইলটি শাহেদ ভেঙে চুরমার করে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। শাহেদের নির্দেশে ডাকাত শাহীনের নেতৃত্বে মামুনকে হাত-পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে যায়। পরদিন ৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রামু রশিদ নগর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের খাদেমের পাড়া এলাকার রেললাইনের পূর্বপাশ হতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মামুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

র‌্যাব আরও জানায়, এই মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। যার প্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করে মূল পরিকল্পনাকারী ঘাতক বন্ধু শাহেদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৫।

র‌্যাব উপঅধিনায়ক শরিফুল ইসলাম জানান, নিহত মামুনের ভাই মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ৭ জুলাই রাতে রামু থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি রাতেই নথিভুক্ত করা হয়। সেই মামলায় শাহেদকে গ্রেপ্তার করে রামু থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

Link copied!