এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রস্তুত করা হচ্ছে মাঠটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের জামাতে আগত মুসল্লিদের জন্য এ বছর থাকবে দুইটি স্পেশাল ট্রেন। এছাড়া জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিনারের সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জন্য মিনার ধোয়ামোছা থেকে শুরু করে রং করা, অজুখানা প্রস্তুত, মাঠে মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। মাঠে মাইকের ব্যবস্থার জন্য খুঁটি পোঁতার কাজও এসময় লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া মুসল্লিদের নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর সুবিধার্থে দাগকেটে লাইন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
মাঠের দায়িত্বশীলরা জানান, এ বছর মাঠে মুসল্লিদের প্রবেশের জন্য থাকছে ১৯টি তোরণ (গেট)। নামাজের সময় বিদ্যুতের সংযোগের পাশাপাশি জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকবে। মাঠের চারপাশে লাগানো হবে শতাধিক মাইক। র্যাবের জন্য থাকবে ওয়াচ টাওয়ার এবং সাংবাদিকদের জন্য সংবাদ সংগ্রহের সুবিদার্থে থাকবে বড় মাচা।
এছাড়া ময়দানের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরার। এ বছর ঈদুল ফিতরের জামাত এই মাঠে শুরু হবে সকাল ৯টায়। এতে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি ট্রেন ঠাকুরগাঁও স্টেশন থেকে ভোর ৫টায় ছেড়ে ওই জেলাধীন শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ, মঙ্গলপুর ও কাঞ্চন স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে সকাল সোয়া ৭টায় দিনাজপুর স্টেশনে পৌঁছবে। অপর ট্রেনটি পার্বতীপুর জংশন স্টেশন থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে মন্মথপুর, চিরিরবন্দর, কাউগাঁওয়ে যাত্রাবিরতি দিয়ে সকাল পৌনে ৭টা দিনাজপুর স্টেশনে পৌঁছবে। এরপর নামাজ শেষ হলে দিনাজপুর স্টেশন থেকে সোয়া ৯টায় একটি পার্বতীপুরের উদ্দেশে এবং অপরটি ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশে ছাড়বে সাড়ে ৯টায়।
জানা যায়, এশিয়া উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ এ ঈদগাহ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এর উদ্যোগ নেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৬টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এই মাঠে ঈদের জামাত বন্ধ ছিল। এরপর ২০২২ সালে এই মাঠে ঈদের নামাজ হয়। এতে অংশ নেন প্রায় ৬ লাখ মুসল্লি।
ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি এবং সার্বিক বিষয় পরিদর্শন করেছেন দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ ইফতেখার আহমেদ। তিনি জানান, ময়দানজুড়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, আনসার সদস্যরা ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। পুরো মাঠে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া ময়দান পর্যবেক্ষণের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি প্রবেশে মেটাল ডিরেক্টর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যবস্থাও রাখা হবে।
ঈদগাহ ময়দানের উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, “গত ঈদুল আজহায় আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরেও সেই ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। বিশাল এই জামাতে দিনাজপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা যেন নামাজে অংশ নিতে পারেন সেজন্য প্রচার-প্রচারণা ও নিরাপত্তার বিষয়ে বরাবরের মতো জোর দেওয়া হয়েছে।”