ফেনীতে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শীতের শুরু থেকে দিনের বেলায় প্রায়শই গ্যাস পাচ্ছেন না জেলার ৩২ হাজার গ্রাহক। রান্নার জন্য একমাত্র ভরসা এলপিজি সিলিন্ডারের। তাতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
জেলা শহর, সদর, দাগনভূঞা, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার গ্রাহকরা জানান, সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার রান্নার সময় গ্যাসের চাপ না থাকায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ফেনী শহরের পূর্ব উকিলপাড়া, পেট্রোবাংলা, বাঁশপাড়া, সহদেবপুর, আলোকদিয়া, পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার, রামপুর, শান্তি কোম্পানি রোড, বিরিঞ্চী, সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী, রতনপুর, দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর, সিন্দুরপুর এলাকার গ্রাহকরা প্রায় সবাই কমবেশি গ্যাস সমস্যার মধ্যে পড়ছেন।
শহরের উত্তর সহদেবপুর এলাকার গৃহিণী শিপু নাথ বলেন, “ভোরে নিভু নিভু গ্যাস থাকলেও সকাল ৭টার পর থেকে চাপ একেবারে কমে যায়। ফলে চুলা জ্বলে না। সকাল ও দুপুরের খাবার তৈরি করতে বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস নিতে হয়েছে।”
সদর উপজেলার বিরলী গ্রামের নাসরিন বেগম বলেন, “রাত ৯টার দিকে গ্যাস আসে আবার সকাল ৭টার দিকে চলে যায়। শীতের রাতে ওই গ্যাস পরিবারের কোনো কাজে আসে না। তখন সবাই ঘুমের প্রস্তুতিতে থাকে। যখন বাসায় গ্যাসের দরকার, তখন লাইনে গ্যাস পাওয়া যায় না। তাই লাইনের গ্যাসের অনিশ্চয়তার কারণে বাসায় মাটির চুলা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি।”
মনোয়ারা আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, “ঘুম থেকে উঠেই চুলোয় গ্যাস না থাকায় রেস্তোরাঁয় গিয়ে সকালের নাশতা আনতে হচ্ছে। দুপুর, বিকেল গড়িয়ে রাতেও পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস। রাত ৯টার পর গ্যাস স্বাভাবিক হলেও তখন রান্নার আগ্রহ থাকে না।”
শহরের পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার এলাকার মিরান উদ্দিন বলেন, “সময়মত গ্যাস না থাকায় রান্নায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী হওয়ায় এক মাস ধরে বাধ্য হয়ে সকাল ও দুপুরের খাবার রেস্তোরাঁয় খেতে হচ্ছে।”
গ্রাহক গণেশ পাল বলেন, “আমরা নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করেও গ্যাস পাচ্ছি না। বরং সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে প্রতিমাসে হাজার তিনেক টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ হিসেবে রান্নায় বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে।”
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ফেনী কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শাহরিয়ার বাপ্পি বলেন, গ্যাসের চাপ চাহিদামত না থাকার সমস্যা শুধু ফেনীর নয়, সারা দেশেই একই চিত্র। গ্যাসের চাপ না থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে সঞ্চালন লাইনে কম গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য ঘাটতি রয়েছে।
শাহরিয়ার বাপ্পি আরও বলেন, গ্যাসের চাপ বাড়িয়ে চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহককে সরবরাহ করতে পুরনো সঞ্চালন লাইনের পাশাপাশি নতুন একটি লাইন স্থাপন করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ লাইন স্থাপন শেষ হলে গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।