নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র’ শুরা সদস্য ও দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুনসহ চার জঙ্গিকে সিলেটের বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে আটক করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরে র্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া উইং এর প্রধান খন্দকার আল মইন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে, সোমবার (৮ মে) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার হাফিজ মাওলানা মাহমুদ হোসাইনের ছেলে ও ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র’ শুরা সদস্য এবং দাওয়াতী শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুন ওরফে মুমিন (৩৪), ফরিদপুরের চরভদ্রসন এলাকার মৃত. শেখ আব্দুস ছালাম মাষ্টারের ছেলে মো. আবু জাফর তাহান (৪০), চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মৃত মোস্তফা কাজীর ছেলে মো. আক্তার কাজী সাইদ অরজে আইজল (৩৮) ও গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার ছেলে সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লা (৩২)।
র্যাব জানায়, সপ্তাহখানেক আগে সিলেটের শহরতলীর বড়শলা এলাকায় মিথ্যা পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয় ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামক জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্য। দ্রুত সময়ের মধ্যে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা নিশ্চিত করে সিলেটে এই জঙ্গি সদস্যদের অবস্থান। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৯ যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, আবু জাফর তাহান, আক্তার কাজী ওরফে সাইদ ও সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লাকে আটক করে।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ মায়মুন সিলেটের স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল সম্পন্ন করেন। অনলাইনে ফিলিস্তিন, মায়ানমার, ইরাকসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দেখে তিনি উগ্রবাদে আকৃষ্ট হন। ২০১৩ সালে তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম নামক জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। আনসার আল ইসলামের সিলেট বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন তিনি।
খন্দকার আল মইন বলেন, “গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ জন তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লা কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র্যাব `জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া` নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র্যাব জানতে পারে এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।”
র্যাবের মিডিয়া উইং আরও বলেন, “পরবর্তীতে অক্টোবর ২০২২ থেকে অদ্যাবধি দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৬৮ জন, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।”
খন্দকার আল মইন বলেন, “গ্রেপ্তারদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় এই সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান মাহমুদ, দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ মায়মুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব। ইতিপূর্বে র্যাব কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও সামরিক শাখার উপপ্রধান মানিক, অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন হোচম্পাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
এছাড়া সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফ এর প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফ এর সঙ্গে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয় এবং কেএনএফ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতো উল্লেখ করে র্যাবের মিডিয়া উইং বলেন, “পরবর্তীতে র্যাবের অব্যাহত অভিযানের পর আমীরের নির্দেশে জঙ্গিরা পাহাড় হতে পলায়ন করে সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে যায় এবং পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”