• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চারশ বছরের সুরা মসজিদে এখনও চলে নামাজ আদায়


বিজন কুমার, দিনাজপুর
প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩, ০৯:৫০ এএম
চারশ বছরের সুরা মসজিদে এখনও চলে নামাজ আদায়

কেউ বলেন সৌর মসজিদ, কেউ বলেন সুরা মসজিদ, আবার কারও মুখে পরিচিত শাহ সুজা মসজিদ নামে। প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর এ যেন এক অপরূপ নিদর্শন। প্রায় ৪০০ বছরের কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার প্রাচীন এই মসজিদটি। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমান পর্যটন ও দর্শনার্থীরা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মসজিদে মানত করলে মনস্কামনাও পূরণ হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘোড়াঘাট থেকে হাকিমপুর উপজেলা পর্যন্ত পাকা রাস্তার পাশেই মসজিদটির অবস্থান। ৪ ফুট উঁচু মজবুত একটি ফ্রেমের ওপরে গড়ে উঠেছে মসজিদের কাঠামো। প্রধান কামরার চারকোণ এবং বারান্দার দুই কোণে বাইরের দিকে কালো পাথরের তৈরি মিনার রয়েছে। প্রধান কামরার ওপরে একটি বড় এবং বারান্দার ওপরে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়াও প্রধান কামরা ও বারান্দার পূর্ব দেওয়াল মিলিয়ে মোট প্রবেশদ্বার রয়েছে তিনটি। মসজিদটির উত্তর দিকে একটি সুবিশাল বিল রয়েছে।

মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্বের অধীন। মসজিদের নামকরণ কিংবা নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও। বাইরের একটি সাইনবোর্ড থেকে পাওয়া যায়, এই স্থাপত্যশৈলী হোসেন শাহী আমলের নিদর্শন। যা নির্মিত হয়েছিল ষোল শতকে দিকে। এই হিসাব অনুযায়ী মসজিদটির বয়স প্রায় ৪০০ বছর। স্থানীয়রা মনে করেন, জিন বা সুররা এক রাতে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তাই এর নাম সুরা মসজিদ। তবে নির্মাণ যে সময়ে হয়ে থাকুক, পুরাতন এই মসজিদে এখনও চলে নামাজ আদায়।

রুবেল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, “আমার বাবা-মায়ের আমি প্রথম সন্তান। বাবা-মায়ের কাছে শুনেছি, তারা নাকি সন্তান প্রাপ্তি আশায় এখানে মানত করেছিলেন। পরে আমি তাদের কোল জুড়ে আসি। পরে আমি ছেলে সন্তানের জন্য এখানে মানত করি। তাকে আমি হাফেজ বানাব। আল্লাহর রহমতে এই মসজিদে মানত করার পর সেই আশা পূরণ হয়েছে। অনেকেই বলেন এই মসজিদ নাকি জিনেরা একরাতে নির্মাণ করেছিলেন। এখানে নামাজ আদায় হয়। আমিও মাঝে মাঝে এখানে আসি নামাজ আদায় করতে।”

সোহানুর নামে একজন দর্শনার্থী বলেন, “হাকিমপুরের দিকে যাচ্ছিলাম। এই মসজিদ দেখে দাঁড়াইলাম। অনেক পুরাতন একটি মসজিদ। আজকে তো নামাজ পড়া হলো।”

স্থানীয় জামাত আলী বলেন, “এই মসজিদে অনেক দূর-দূরান্তের মানুষ আসে। মানত করেন, অসুখ বিসুখ ভালো হয়। এই টুকুই আমরা জানি। আর শুক্রবার লোকজন বেশি হয়। এখানে যে পুকুরটা আছে, তার চারপাশে কবরস্থান আছে। আমাদের গ্রামে কেউ মারা গেলে এখানেই মাটি দিই। এই মসজিদ কীভাবে নির্মাণ হইছে, তা আমার বাবা-দাদারাও জানেন না। আমরাও জানি না। তবে লোকমুখে শুনেছি জিনেরা নাকি একরাতেই এটা নির্মাণ করেছিলেন।”

মসজিদের ইমাম সাব্বির আহমেদ বলেন, “অনেক দূরের মানুষ আসে এখানে মানত করে, নামাজ পড়ে। মিলাদ দেয়। শুক্রবারে অনেক মুসল্লি আসেন। অনেক জাঁকজমকপূর্ণ একটি পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। দানবাক্স আছে। অনেকেই দান করেন। ওই দানের টাকা দিয়ে মসজিদের ইমাম, খাদেমসহ আনুষঙ্গিক খরচ চলে।”

Link copied!