• ঢাকা
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাসেল-টুম্পার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৬:৫৩ পিএম
রাসেল-টুম্পার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন

রাসেল (১৬) ও টুম্পা (১৫)। বয়সে এক বছরের বড়-ছোট। মা হীরাকে হারিয়েছে অল্প বয়সে। এরপর থেকে বাবা সোহেলের সঙ্গে ভালভাবেই দিন অতিবাহিত করছিল। তবে, এরমধ্যে নদী নামের এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সোহেল। দীর্ঘদিন সোহেল ও নদী একসঙ্গে সুখীভাবে জীবনযাপন করলেও গত বছর তিন মাসের ব্যবধানে বার্ধক্যজনিত কারণে সোহেল ও নদী মারা যান। বাবা-মাকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করছিলে রাসেল ও টুম্পা।

বেশ কয়েকদিন ধরে তারা দুই ভাই-বোন রাসেল ও টুম্পা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে এদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। তারপরও সুস্থ হয়ে উঠেনি।

এতক্ষণ যাদের কথা বলছিলাম তারা কোনো মানব জাতি না। তারা কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সিংহ সোহেল ও সিংহী টুম্পা।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, অসুস্থ সিংহ রাসেল ২০০৭ সালের ১৫ অক্টোবর একং সিংহী টুম্পা ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর সাফারি পার্কে জন্ম নেয়। বর্তমানে সিংহ রাসেল ১৬ বছর এবং সিংহী টুম্পা ১৫ বছর বয়স অতিক্রম করছে। সিংহরা মুলত ১৬ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বর্তমানে রাসেলের বয়স ১৬ ও টুম্পার বয়স ১৫ অতিক্রম হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে পার্কে ৫টি সিংহ রয়েছে। এদের মধ্যে ২টি সিংহ ও ৩টি সিংহী। গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পা খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। বাত, ব্যাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান অবশ হয়ে যাচ্ছে, দাঁতে ক্ষয়, ঘন ঘন প্রস্রাব শুরু করে।

এরপর থেকে দুই ভাই-বোনকে বেষ্টনিতে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন সাফারি পার্কের ভেটেরেনারি সার্জন ডা. হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন। মাঝখানে তারা কিছুটা সুস্থ হলেও পরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের অধিকতর চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

এই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১৪ জানুয়ারি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করেন। এই মেডিকেল টিমের প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী ও অ্যানিমেল সাইসেন্স বিশ্ববিদ্যালয়েল মেডিসিন ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ ড. বিবেক চন্দ্র সুত্রধর।

এছাড়াও অন্য চার সদস্য হলেন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ভজন চন্দ্র দাস, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের অব. পরিচালক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন, চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকাই নাইন।

পরবর্তীতে রোববার (১৫ জানুয়ারি) মেডিকেল টিমের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যের টিম কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এসে রাসেল ও টুম্পার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন।

মেডিকেল টিমের বরাত দিয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “রাসেল ও টুম্পার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে মানুষ আর প্রাণীর রোগ অনেকটা একই ধরনের। মানুষের স্বাভাবিক যে রোগগুলো হয়, প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একই রকম হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকদের মতে সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পা গ্যাস্ট্রলোজিকেল সমস্যায় ভুগছে। সেজন্য তারা খাবার খেতে চাচ্ছে না। আশা করি শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!