বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ দিনপর মৃত্যুবরণ করলেন কলেজছাত্র ইমন হাসান।
রোববার (১৮ আগস্ট) ভোর ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ইমনের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার জগৎপুরা গ্রামে।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইমন হাসান নলিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ভূঞাপুরের অলোয়া মনিরুজ্জামান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাশ করে গোপালপুরের হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। পরে নিজের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের হাল ধরতে টাঙ্গাইলের এক চাচার বাসায় থেকে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে টিউশনি করতেন।
স্থানীয়রা জানান, যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর পাশের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন গ্রামের তার নানা কীতাব আলী শেখের বাড়িতে আশ্রয় নেয় ইমনের পরিবার। সেখানে ১০ বছর থাকার পর তার বাবা জুলহাস উদ্দিন মারা যান।
ইমনের বাবা ছিলেন ভ্যানচালক। ইমনরা তিন ভাই ও এক বোন। তারমধ্যে ইমন ছিল বড়। বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ইমনকেই পরিবারের হাল ধরতে হয়েছিল। এর আগে দরিদ্র ইমনের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা রিনা বেগম অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন।
সরেজমিনে ইমনের নানা ও দাদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। ইমনের মৃত্যুতে তার স্বজনরা আহাজারি করছেন। এসময় কথা হয় ইমনের দাদী ময়মনা বেগমের সঙ্গে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনে মির্জাপুরের গোড়াই নামকস্থানে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিল আমার নাতি। সেই মিছিলে পুলিশের গুলিতে ইমন আহত হয়। শুধু তাই নয়- পুলিশরা গুলি করেও শান্ত হয়নি, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথারি লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এসময় তার বন্ধুরা আহত ইমনকে হাসপাতালে নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সেখান থেকে সরে গেলে গুরুত্বর অবস্থায় তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত ৬ তারিখে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার খরচ সামলাতে না পেরে ঢাকা মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার ১৩ দিন রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আমার নাতি।”
ইমনের প্রতিবেশী বন্ধু রনি, রঞ্জু, সাইফুল, শাকিব ও অন্তর বলেন, “ইমন টাঙ্গাইল শহরের তার চাচা নবাবেব বাসায় থেকে টিউশনি করত। ইমন অনেক ভালো মনের মানুষ ছিল, পুরো পরিবার তার ওপর নির্ভরশীল। সে মারা যাওয়ায় সংসারের হাল ধরার আর কেউ রইল না। ইমনকে হারিয়ে পরিবারটি এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল।”
ইমনের মৃত্যুর খবরে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা।