নীল আকাশে সাদা মেঘের ছোটাছুটি, নদীর পাড়ের কাশফুলগুলোতে বাতাসের দোল। শরতের এই মনোরম দৃশ্য জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শুরু হয় দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানিকতা, শেষ হয় দশমীর মধ্য দিয়ে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের থাকে নানা প্রস্তুতি। দুর্গাপূজার প্রধান উপজিব্য প্রতিমা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ঘিরে নরসিংদীতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
প্রতিমা তৈরির শিল্পালয়গুলোতে গিয়ে দেখা যায় মৃৎশিল্পিদের ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ। কারও যেন কথা বলার সময় নেই। বাঁশ, কাঠ, খর আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সবাই। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেগুলো শুকানোর পর দেওয়া হবে রং তুলির আঁচড়, সাজানো হবে বিভিন্ন অলংকারে।
মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি মণ্ডপের প্রতিমার প্রাথমিক কাজ শেষ করতে কারিগরসহ ৫ জন শ্রমিকের ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। প্রাথমিক কাজ শেষে ১০-১৫ দিন পর ওই প্রতিমাতে রং তুলির আঁচড় দেওয়া হয়। এরপর প্রতিমাগুলোতে বিভিন্ন অলংকারে সজ্জিত করে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সারা দেশে নরসিংদীর তৈরি প্রতিমার বেশ চাহিদা রয়েছে। এখানকার প্রতিমা সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় যায়। তবে এবছর তেমন অর্ডার পাচ্ছেন না বলে সংবাদ প্রকাশকে জানিয়েছেন বিশ্বকর্মা শিল্পালয়ের সত্ত্বাধিকারী সঞ্জিত পাল। তিনি বলেন, “এবছর প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত বাঁশ, কাঠ, খেড়, সুতাসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই তুলনায় প্রতিমার দাম বাড়েনি। দেশের এই পরিস্থিতিতে পূজার সংখ্যাও কমে গেছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ডার কম। আমার এখানে ৪০টা প্রতিমা তৈরি করেছি। প্রতিমার প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষ এখন রং দেওয়া বাকি। আমাদের কারখানায় ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের প্রতিমা আছে।”
প্রতিমা ঘর শিল্পালয়ের সত্ত্বাধিকারী দুলাল পাল বলেন, “একজন কারিগরসহ ৫ জন শ্রমিকের ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে একটি প্রতিমার প্রাথমিক কাজ শেষ করতে। পরে প্রায় এক মাস শুকানো শেষে রং করতে আরও লেগে যায় ২দিন। গত বছর যে মূর্তি ৪০ হাজারে বিক্রি হয়েছে এ বছর সেই মূর্তির দাম ২০ হাজার টাকা বলে। যে পরিস্থিতি লাভবান হওয়ার আশা ছেড়ে আসল আসেনি সেই চিন্তায় আছি।”
দুর্গা শিল্পালয়ের সত্ত্বাধিকারী কালিপদ পাল জানান, মাটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। সপ্তাহখানেকের মাঝে রংয়ের কাজ ধরা হবে। এবছর মূর্তির দাম অনেক কম। কারিগরের মজুরি, ঘর ভাড়া দিয়ে কিছুই থাকে না।
স্বাধীনতার পর থেকে নরসিংদীতে কোনো ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবারও সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে পূজা উদযাপন করা হবে- এমনটাই আশা ব্যক্ত করেছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি মাখন দাস।