তীব্র তাপদাহের কারণে বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের বোরো ধান চাষিরা। অতিরিক্ত গরমের কারণে দিনে পাকা ধান কাটতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে রাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধান কাটছেন তারা।
জানা যায় চর কাশাভোগ এলাকার মিজান শিকদার এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটা খুশি তিনি। তবে বিপত্তির সৃষ্টি হয় ধান পাকার পর। প্রচণ্ড তাপদাহে দিনের বেলা ধান কাটতে রাজি হচ্ছিল না অনেক কৃষাণরা। পরে সিদ্ধান্ত নেন রাতেই কাটা হবে জমির ধান। এরপর ৪ জন কৃষাণ নিয়ে চাঁদের আলোকে সঙ্গী করে ধান কাটতে শুরু করেন। রাত ৯টা থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এ ধান কাটা। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে তার।
মিজান শিকদার বলেন, “আমরা সব সময় দিনের বেলাতেই ধান কাটি। এ বছর প্রচণ্ড তাপের কারণে দিনের বেলা কৃষাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। এই নিয়ে আমি বেশ বিপাকে পড়ে যাই। পরে আমার এক ভাই রাতের বেলা ধান কাটার উপদেশ দিল। কৃষাণদের বলতেই তারা রাজি হয়ে গেল। যখন দিনের গরম কমে যায় তখন আমরা ধান কাটার কাজ শুরু করি।”
মিজান আরও বলেন, “বর্তমানে আমাদের জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাতে ধান কাটা হচ্ছে। এতে হিট স্ট্রোক এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। তবে এসকল চাষিরা যদি আমাদের হারভেস্টার মেশিনগুলো ব্যবহার করেন তাহলে আরও দ্রুত ধান সংগ্রহ করতে পারবেন।”
আংগারিয়া এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, “আমি রাতের বেলায় কৃষাণ নিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনের বেলা হিট স্ট্রোকের ভয়ে অনেকে ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতেই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।“
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ১৫১ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় ৩ হাজার ৮২১ হেক্টর ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
গত বছর জেলায় আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরোধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। তবে একটানা চলা প্রচণ্ড তাপদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, “প্রচণ্ড তাপদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তাই যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।”