২৩ বছরের যুবক খোকন সরকার। তার দুটি কিডনিই প্রায় বিকল হয়ে গেছে। ছেলের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিতে চান বাবা মনোরঞ্জন সরকার। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন এ অসহায় বাবার কাছে তা নেই ।
মনোরঞ্জন সরকার সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের কুনকুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় ঢেকুরিয়া বাজারের একটি দোকানে নরসুন্দরের কাজ করেন। তার একমাত্র ছেলে খোকন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সম্মান চতুর্থ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী।
খোকনের স্বপ্ন পড়ালেখা শেষ করে একটা ভালো চাকরি করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে। তবে সেই স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার অসুস্থতা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খোকন। তখন চিকিৎসার জন্য বগুড়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিলে সেখানকার ডাক্তাররা বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার করান। রিপোর্ট হাতে এলেই জানা যায় খোকনের কিডনিতে সমস্যা আছে। তার দুটো কিডনিই ৭৫ শতাংশ বিকল হয়ে পড়ে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শেই রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। জুনের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত সপ্তাহে দুদিন করে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হয় তার।
খোকন সরকার জানান, সপ্তাহে দুইদিন ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। সেখানেও খরচ হচ্ছে সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার টাকা। এ টাকাগুলো যে কিভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে সেটা বোঝানোর উপায় নাই। এখন বাবা আমাকে বাঁচাতে একটা কিডনি দিতে চাইছেন। সেটা নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা। কিডনিটা প্রতিস্থাপন করতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগবে। এই টাকা সংগ্রহের কোনো রাস্তা আমাদের নেই। জানি না আমি বাঁচবো কিনা। আমি আশা করব আমার জীবন বাঁচাতে সবাই এগিয়ে আসবে।
খোকনের বাবা মনোরঞ্জন সরকার বলেন, পরিবার ও স্বজনদের সহযোগিতায় চিকিৎসা করালাম এতদিন। এখন আমার নিজের আড়াই শতাংশ বসতভিটা ছাড়া কিছুই নেই। ডাক্তার বলেছেন খুব দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তাছাড়া আমার ছেলেকে বাঁচানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা আমার কিডনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছে আমার কিডনিটা ম্যাচিং হয়েছে। আমি তাকে কিডনি দেব। কিন্তু অপারেশন ও চিকিৎসার টাকা পাব কোথায়? ডাক্তার বলেছে এর জন্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগবে।
কোনো উপায় না পেয়ে মনোরঞ্জন সরকার তার ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তশালী, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবি ও প্রবাসী ভাই-বোনদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, আপনাদের সবার অনুদানের সহায়তায় বেঁচে যেতে পারে আমার ছেলের জীবন। আমার পরিবার ফিরে পাবে বেঁচে থাকার অবলম্বন।
এ ব্যাপারে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই এবং এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো আবেদনও করেনি। তবে তারা যদি সমাজসেবা অধিদপ্তরে কোনো আবেদন করে থাকে, তাহলে পর্যালোচনা করে তাদের একটা অনুদানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। আমি চেষ্টা করব এর বাইরেও কিছু করা যায় কিনা।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কিডনিসহ তিনটি রোগের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিতে পারি। তারা যদি আমাদের বরাবর আবেদন করে তাহলে পর্যালোচনা করে আমরা তাদের অনুদানটি পাওয়ার ব্যবস্থা করব।
এই পরিবারকে অনুদান দেওয়ার জন্য ০১৭৭৮৯২৩৮৪১ ও ১৭৫৪১৫০৯৫ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন ছেলের বাবা মনোরঞ্জন।