• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

মেয়ের গলা কেটে বাবার আত্মহত্যা


বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
মেয়ের গলা কেটে বাবার আত্মহত্যা

বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মেইন সড়ক এলাকার স্বপ্ন বিলাস বহুতল ভবনের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে বাবা ও শিশু কন্যার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

বুধবার (১২ জুন) সকালে  তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

নিহতরা হচ্ছেন নাঈম হাওলাদার (৩৫) এবং তার মেয়ে রাবেয়া বশরী রোজা (৫ বছর ৪ মাস)। ওই ফ্ল্যাটে তারা স্বজনদের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন। 

নাঈম উজিরপুরের বরাকোঠা এলাকার শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে এবং ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিনের গাড়ির চালক ছিলেন।

দাদি নাসিমা বেগম ও ফুফু আখি আক্তার জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের কারণে চার মাস আগে স্ত্রীকে তালাক দেন নাঈম। কিন্তু মেয়ে রোজাকে তার কাছে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক মামলাও হয়েছে। এ কারণে নাঈম মানসিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসাও চলছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার মোবাইল করে রোজার মা জানিয়েছে আজ বরিশালে এসে মেয়েকে তার কাছে নিয়ে যাবে। এ খবর পাওয়ার পর থেকেই আরও ভেঙে পড়ে নাঈম। তিনি কোনোভাবেই তার মেয়েকে হাতছাড়া করতে চাননি। আজ সকালে যে কোনো সময় রোজাকে বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে একই বটি দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিষয়টি ধরা পড়ে।

নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ফ্ল্যাটের তিন কক্ষে প্রথম কক্ষে ঘুমাতেন তার স্ত্রী এবং মেয়ে। ভেতরের কক্ষে থাকতেন নাঈম, তার মেয়ে এবং তিনি। আজ সকালে ঘুম থেকে জেগে বাইরে যাওয়ার সময় নাঈম তার কাছ থেকে চেয়ে ২০ টাকা নেয়। এ সময় বাবা-মেয়েকে খাটে দেখতে পান তিনি। সকাল ৭টার বের হওয়ার পর ৯টার দিকে তার মেয়ে নাসিমা মোবাইলে এ ঘটনা জানায়।

তার ধারণা তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার পরই নাঈম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে তালাক হওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে সমস্যা দেখা দেয় নাঈমের। তার মধ্যে রোজার মা খবর দেন মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এসব বিষয় নিয়ে হয়ত এ ঘটনা ঘটিয়েছে নাঈম।

তিনি আরও বলেন, ৬ বছর আগে নাঈমের সাথে বিয়ে হয় অনার। ওই সময় জোর করে নাঈমের সঙ্গে অনাকে বিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিয়ে আমরা মেনে নেই। কিন্তু গত এক বছর ধরে নাঈম ও অনার মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল না। তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। এ নিয়ে দুই পক্ষ থেকেই একাধিক মামলা দায়ের হয়। গেল চার মাস আগে তালাক দেওয়া হয় অনাকে। এর মধ্যে অনার এক ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।

বাড়িওয়ালা মো. পলাশ বলেন, চার মাস আগে নাঈম তার মা-বাবা ও বোনকে নিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। ফ্ল্যাটে ওঠার পর থেকেই নাঈমকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হতো। বিষয়টি তার স্ত্রীও খেয়াল করে তাকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার আগে নাঈমের সঙ্গে তার স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আজ বুধবার সকালে ওই ফ্ল্যাট থেকে ডাক-চিৎকার শোনার পর তারা জানতে পারেন রোজার গলাকাটার পর নাঈম একই বটি দিয়ে নিজের গলাকেটে আত্মহত্যা করেন। এরপর বিষয়টি ৯৯৯-এ ফোন করলে কাউনিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যান।

বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুকে গলাকেটে হত্যার পর বাবা নিজের গলাকেটে আত্মহত্যা করে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নাঈমের সঙ্গে তার স্ত্রীর তালাক হয়েছে। এরপর থেকে শিশুকন্যাকে কাছে রাখেন নাঈম।

পরিবারের স্বজনদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, আজ সকালে রোজার মায়ের আসার কথা ছিল। রোজাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এ বিষয়টি নাঈম মানতে পারেনি। সেখান থেকেই হয়তো তিনি এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে পারে। তবে বিষয়টি আরও গভীর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। 

Link copied!