‘অভাবের সংসার, ভিক্ষা করে কোনোমতে দিন পার করলেও রাতে মাথা গুঁজেন জীর্ণ শীর্ণ বৃষ্টিতে পানি পড়া ছাপড়া ঘরে। প্রতিবার রোজা যায় ফের রোজা আসে, কেউ আমাগো খোঁজ রাখে না বাপ। কেউ কোনোদিন টেবিল-চেয়ারে বসিয়ে ইফতার তো দূরের কথা, কোনোদিন পানিও খাওয়াইনি। আজ সে সৌভাগ্য হলো। আমরা খুশি, অনেক খুশি। আল্লাহ এদের ভালো করুক।’
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে এতিম, অসহায় ও হতদরিদ্রদের জন্য ব্যতিক্রম এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে ফরিদপুরের জেলা পুলিশ।
শনিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় দাওয়াত পেয়ে ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সের ড্রিলশেডে এ ইফতার মাহফিলে উপস্থিত হয়ে মালেকা বেগম ও জরিনা বিবি নামের দুজন ভিক্ষুক কথাগুলো বলছিলেন।
পুলিশের এ ব্যতিক্রম উদ্যোগকে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে মালেকা ও জরিনা বিবি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন আল্লাহ যেন তাগো (তাদের) মনের আশা পূরণ করেন, ভালো রাখেন।”
মালেকা, জরিনা, ঝুমকি ও রিনা বেগমের মতো অন্তত দুইশ ভিক্ষুক, এতিম, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল নারী অংশ নের এই ইফতার মাহফিলে।
নারী ছাড়াও এসময় পুরুষ অসহায় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হতদরিদ্ররা অংশ নেয় এ ইফতারে।
এসময় ইলিয়াস তালুকদার, কামাল মন্ডল ও মোতালেব শেখ নামের তিন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, “আজ ধনী-গরিব, এতিম ও অসহায় একই টেবিল-চেয়ারে বসে ইফতার করছি। কোনোদিন এমন করে দাওয়াত করে ইফতার করায়নি কেউ। পুলিশ যেটা করল সেটা মনে থাকবে অনেকদিন, অনেককাল। পুলিশ যে আমাদের মতো অসহায়দের কথা মনে রাখে ভাবতেই ভালো লাগছে। অনেক বছর পর পেটপুরে দুমুঠো ভালো খাবার দিয়ে ইফতার করলাম।”
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, পুলিশ শুধু দেশের আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের জানমালেরই রক্ষা করে না। পুলিশ সমাজের মানবিক কাজগুলো করে থাকে। এরই অংশ হিসেবে ফরিদপুর জেলা পুলিশ আজ এতিম, অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের সম্মানে রমজানে ইফতারের ব্যতিক্রম এ মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে।
ইফতার মাহফিলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন, কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান, ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) তুহিন লস্করসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।