চলনবিল অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার উৎসব। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দ্রুত ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। অন্যদিকে, ফসলের মাঠে ও বাড়ির উঠোনে চলছে ধান মাড়াই। দম ফেলার ফুরসত নেই যেন। এ বছর ধানের ভালো ফলন পেয়ে সবাই খুশি। ঝড়-বৃষ্টির আগেই ধান কাটা শেষ করতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
চলনবিলের বুকজুড়ে সোনালি ধানের সমারোহ দোলা দিচ্ছে কৃষকের মনে। কিন্তু আকাশের কালো মেঘ, যেকোনো সময় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাদের কপালে। এমন চিত্র পাবনার চলনবিলের।
এই পরিস্থিতিতে দ্রুত ধান কেটে বাড়ি নেওয়া ও মাড়াই করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অনেকে স্থানে মাঠেই চলছে ধান মাড়াই। চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে এভাবেই চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব।
সোমবার (৮ মে) সকালে চলনবিলের চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের একদল ধান কাটায় ব্যস্ত। আরেকদল সেই ধানা মাথায় করে বাড়ি নিচ্ছেন। আবার অনেক কৃষক মাঠের পাশেই ধান মাড়াই করে বস্তায় ভরতে ব্যস্ত।
বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক আনিসুল হক বলেন, “অকাল বন্যা বা কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির হাত থেকে ধান রক্ষায় আগেভাগেই ধান কাটা শুরু করেছি। গত বছর এই সময় অকাল বন্যায় ধান ডুবে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। যদি এবার ধান কাটার আগেই তেমন হয় তাহলে কৃষকরা শেষ হয়ে যাবে।”
আরেক কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, “শুনতেছি আগামী সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। প্রায় প্রতিদিন আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যায়। কখন না জানি ঝড়, বৃষ্টিতে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধান কেটে ঘরে তুলতে চাচ্ছি।”
আরও কয়েকজন কৃষক জানান, এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। বিঘায় ২০-২৫ মণ ধান হয়েছে। বাজারে দামও মোটামুটি ভালো আছে। খরচ বাদে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারব। এবার ধান কাটায় শ্রমিক সংকট নেই।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো। কিছুদিন হলো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে। ঝড়, শিলাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষায় শতকরা আশি ভাগ ধান পাকলেই দ্রুত কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।”
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর পাবনা জেলায় বোরো আবাদেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর। আবাদ হয় ৫৬ হাজার ২০৭ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন।