• ঢাকা
  • সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ২৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আলুর বাম্পার ফলনের আশা, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা


বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৮:২৩ এএম
আলুর বাম্পার ফলনের আশা, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

বগুড়ার শেরপুরে আলুর বাম্পার ফলনের আশায় আলুচাষিরা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৈরী আবহাওয়ার কবলে না পড়লে এবার আলুর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি ন্যায্য দামও পাওয়ার আশা তাদের। গত মৌসুমে আলুর ভালো ফলন হলেও কিছুটা দাম কম হওয়াতে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি আলু স্টোর করে চরম লোকশান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। আগের সব দুঃখ ভুলে এ বছরও বিপুল পরিমাণ জমিতে নতুন করে আলু চাষ করেছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শেরপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬২৫ হেক্টর। সেখানে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আলু ক্ষেতে ভাইরাস নেই বললেই চলে। তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষকদের। যেকারণে বাম্পার ফলনে চাষিরা অনেকটা আশাবাদী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পোর্ষি, আমইন, পানিশারা, বউবাজার, দারুগ্রাম, খুরতা, দক্ষিণ আমইন, তালতাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মাঠজুড়ে যে দিকে চোখ যাবে, সেদিকে শুধু দেখা যাবে আলুর ক্ষেত। গাছ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন। তবে ক্ষেত থেকে আলু উত্তলনের সময় কাঙ্ক্ষিত দাম পাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন চাষিরা।

পোষি গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, এ বছর ১১ বিঘা জমি চাষ করেছি। আলুক্ষেতের লক্ষণ দেখে ভালো মনে হচ্ছে। আর কিছুদিন গেলেই এসব জমি থেকে আলু তোলা হবে। ইতোমধ্যে আগাম জাতের কিছু কিছু জমির আলু বাজারে তোলা হয়েছে। দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

হেলাল উদ্দিন তিনি বলেন, “এখন বাজারে আলুর দাম ভালো থাকলেও সামনে আলু তোলার উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যে আমরা আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার কোল্ডস্টোরেজগুলোতে যোগাযোগ করছি। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই বুকিং দেওয়ায় আমাদের মতো ছোট চাষিদের তেমন কোনো সুযোগ পাচ্ছি না।”

দক্ষিণ আমইন গ্রামের আলুচাষি আলহাজ্ব হারেজ বলেন, “আমি ৯০ বিঘা জমি চাষ করেছি। গাছ খুব ভালো হয়েছে। সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এ বছর বেড়েছে সার, কীটনাশকের ও শ্রমের ব্যয় বেশি পড়েছে।”

শেরপুর উপজেলার পানিসারা গ্রামের আলু চাষি ফজলু, আশরাফুল, মকবুল হোসেন বলেন, “গত বছরের শুরুতে দাম ভালো পাওয়া গেলেও শেষের দিকে দাম কমে গিয়েছিল। তবে এ মৌসুমে আলু চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছি। ইতিমধ্যে উপজেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখলে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা অতীতের ন্যায় কৃষককে জিম্মি করে পানির দরে আলু কিনে কোল্ডস্টোরেজে মজুত রাখার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

তারা আরও বলেন, “এক বিঘা জমিতে ১০০ থেকে ১২০ মণ আলু হয়। বর্তমানে আলুর দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আলু যখন ওঠানোর সময় হয় তখন আমরা দাম পাই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এ জন্য চাষকে লাভজনক করে তুলতে আলুর দাম বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি।”

শেরপুর উপজেলার কৃষি অফিসার ফারজানা আক্তার বলেন, “কৃষি বিভাগের একান্ত প্রচেষ্টায় এ বছর আলুর ক্ষেতকে রোগ বালাইমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। উপজেলার কোথাও আলুর ফলন বিপর্যয় হয়নি। আশা করা যাচ্ছে সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আলুর বাম্পার ফলন হবে।”

Link copied!