উত্তরের জেলা নওগাঁয় বাড়ছে শীতের প্রকোপ। হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। এ বছর ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এই জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। ভরা মৌসুমের আগেই দুই থেকে তিন দফায় উৎপাদন ও সরবরাহ হবে। আবহাওয়া ভালো থাকায় চাষিরা নির্বিঘ্নে ফসল চাষ করছেন।
সরেজমিনে মান্দা উপজেলার নবগ্রাম এলাকার মাঠগুলোতে দিনভর চাষিদের ব্যস্ততা দেখা যায়। মূলা, শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ হরেক রকম শীতকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। জমি প্রস্তুত, বীজ বপন, সার-বালাইনাশক প্রয়োগ, চারার পরিচর্যা ও নতুন ফলন তুলে বাজারে সরবরাহ করছেন চাষিরা।
নবগ্রামের চাষি সোলাইমান হোসেন জানান, গ্রীষ্মকালীন সবজির যোগান প্রায় শেষ। এখন প্রায় সব কৃষকই ঝুঁকেছেন শীতকালীন সবজি চাষে। গ্রীষ্মকালীন চাষাবাদ কঠিন ছিল। শুরুতে তীব্র খরায় চারা রোপন ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। দফায় দফায় কীটনাশকের দাম বাড়ায় চাষিদের হিমশিম খেতে হয়েছে। রোগ-বালাইয়ের আক্রমণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ফলন পাননি চাষিরা।
প্রায় ৩ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন করলা, মিষ্টি কুমড়া, বইকচু ও কাঁচা মরিচের আবাদ করেছিলেন বর্ষাইল এলাকার কৃষক রফিক উদ্দিন। এখন সেই জমিগুলোতে শীতের আগাম জাতের মূলা, টমেটো, কপি, শিম চাষ করছেন। তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির বাজার দর ভালো ছিল। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়নি। তাই লাভের আশায় তারা দ্রুতই আগাম শীতকালীন চাষাবাদে শুরু করেছেন।
মৈনম গ্রামের চাষি মুনছুর রহমান বলেন, শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের শুরু থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। বর্তমানে তিনি ৩ বিঘা জমিতে মূলা চাষ করেছেন। ৪ বিঘা জমিতে কপি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই চারা তৈরি হয়েছে। নতুন সবজির ভালো দাম থাকায় চাষিরা আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।
মুনছুর রহমান বলেন, বাজারে নতুন মূলার দর ৫০ টাকা কেজি। আগাম জাতের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। শিমের কেজি ১২০ টাকা। শীতের শুরু থেকে একই জমি ব্যবহার করে শীত মৌসুমে ৩ থেকে ৪টি ফসল উৎপাদন করেন চাষিরা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন আগাম শীতের সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আবহাওয়া ও বাজারে সবজির ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ধান ও আমের পর নওগাঁ জেলা সবজি উৎপাদনে এগিয়ে আছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত ফলন এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। চলতি মৌসুমে সময় উপযোগী চাষাবাদে কৃষিবিষয়ক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।