সম্প্রতি ড্রাগন ফল নিয়ে নানা ‘অপপ্রচার’ ও ক্ষতিকর ‘রাসায়নিক দ্রব্য’ ব্যবহারে বাজারে এই ফলের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তাতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যশোরের শার্শার ড্রাগনচাষিরা। ৩০০ টাকা কেজির এই ফল ৮০-১০০ টাকায় কেজি বিক্রি করছেন তারা। যার ফলে খরচের তুলনায় বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে চাষিদের দাবি। আবার তারা ক্রেতা সংকটেও পড়ছেন।
চাষিরা বলছেন, নানা অপপ্রচারের কারণে এখন অর্ধেক দামেও ড্রাগন ফল বিক্রি করা যাচ্ছে না। এছাড়া হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে অনেক ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই ড্রাগন ফল নিয়ে অপপ্রচার রোধ ও সংরক্ষণে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, হিমাগার থাকলে ড্রাগন দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রাখা সম্ভব, চাষিদের এটা ভুল ধারণা।
বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন করা ড্রাগন ফলের পুরোটাই লাল রঙের হয়, খোসাও থাকে পাতলা। আর কৃত্রিমভাবে বড় করা ড্রাগন ফলের খোসা মোটা থাকে এবং সেই ফল পুরোপুরি লাল হয় না। তাই ক্রেতারা দেখলেই সহজে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ড্রাগন ফল চিনতে পারেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছরে উপজেলার ২৮ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে।
ফলচাষিরা এখন বিভিন্ন আড়তে ১০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাও আবার ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার সবচেয়ে বড় ও পুরাতন ড্রাগন চাষি হিসেবে পরিচিত রাসেদুল ইসলাম । ২০১৬ সালে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ চাষ শুরু করেন। তিনি চলতি বছরে ডিহি ইউনিয়নে পাঁচ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। যেখানে রয়েছে কয়েক হাজার ড্রাগন গাছ। ঢাকা কারওয়ান বাজার, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ড্রাগন বিক্রি করে থাকেন।
রাসেদুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা তথ্য ও কিছু অসাধু চাষির জন্য ড্রাগনের বাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত বছরে এই সময়ে ভালোমানের ড্রাগন ফল কেজিপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বছরে সেই ফলের পাইকারি দাম মাত্র ৫০-৬০ টাকা কেজি। অন্যদিকে বিক্রি করতে না পারলে কয়েক দিনের মধ্যেই ড্রাগন ফল পচে কিংবা শুকিয়ে যায়। তাছাড়া শার্শায় ড্রাগন সংরক্ষণের মতো কোনো কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার নেই। ফলে আড়তদারেরা যে দর বলছেন তাতেই ফল বিক্রি করতে হচ্ছে।
আক্তারুজ্জামান নামের আরেক চাষি বলেন, ছয় বছর ধরে ড্রাগন ফলের আবাদ করছেন। কিন্তু ফল বিক্রি নিয়ে এবারের মতো কখনো এত মুশকিলে পড়েননি। বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে মানুষ ড্রাগন ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, যাতে কিছু চাষি ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে ফল উৎপাদন করছেন, যার খরচ কম ফলন বেশি। এরকম পরিস্থিতিতে ওই ধরনের চাষিদের কারণে ফলের দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে।
কামাল হোসেন নামের এক চাষি বলেন, ড্রাগন চাষে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতকে) প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু চলতি বছরে দাম না পাওয়ার কারণে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া এলাকায় ড্রাগন চাষের ফলে বেকার শ্রমিকদের একটি কর্মস্থানে সুযোগ হয়েছিল।
এলাকার অনেক চাষি জানান, আগামীতেও দামের এই পরিস্থিতি থাকলে এই ফলের আবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। তখন আগের মতো বিদেশ থেকে এই ফল আমদানি করতে হবে। এতে বাজারে দাম অনেক বেড়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে শার্শা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় তিনজনকে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শ দিয়ে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান দেশের কিছু অসাধু ড্রাগন চাষীরা মানব দেহে ক্ষতিকর বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। যার ফলে, সাধারণ মানুষ হুমকির মুখে পড়ছে।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) প্রতাপ মন্ডল বলেন, ড্রাগনের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর কম। তবে কৃষকদের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া কৃষকরা যেটা মনে করছেন হিমাগার থাকলে ড্রাগন দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রাখা সম্ভব এটা ভুল ধারণা। সব ফল হিমাগারে রাখা সম্ভব নয়