জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদরে ফসলের মাঠে কোথাও ফাঁকা নেই এক খণ্ড জমি। যত দূর দৃষ্টি পড়ে সবুজ আর সবুজ।
মেলান্দহ উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ২০০ হেক্টর। তবে তার চেয়ে বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। তা ছাড়া স্বল্প জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও তা বৃষ্টিতে ধুয়ে আমন ধানের ক্ষেত এখন গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠ পরিচর্যায় কোনো কমতি নেই। কৃষক ধানের জমির চারদিক ঘুরে শান্তির নিশ্বাস ফেলছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, ছবিলাপুর, ফুলকোচা, ঝাউগড়া, কুলিয়া, মাহমুদপুর, শ্যামপুর, আদ্রা, নাংলা এলাকার আমনের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেত গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। যেন আমনের মাঠ গাঢ় সবুজ পোশাকে সজ্জিত হয়েছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে এখন কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফসল ভালো রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষেত থেকে আগাছা পরিষ্কার, পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার ও সার ছিটানোর কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। তারা বলছেন মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর উপজেলায় আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। ধানের চারাগুলো থেকে কয়েকদিন পর বের হবে থোর। এরপরই কৃষকদের আমন ক্ষেত থেকে বের হবে ধানের ম ম গন্ধ।
ঝাউগড়ার কৃষক আব্দুর রফিক বলেন, ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড় তেমন না থাকায় কয়েক দিনেই ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। পুরো মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ দেখা যায়। ফসলের এই রূপ দেখে মনে আত্মতৃপ্তি মেলে।
ছবিলাপুরের কৃষক নূর আমিন বলেন, “মাঠজুড়ে ধানের সবুজ রং দেখলে মন ভরে যায়, বুকে তৃপ্তি আসে। আশা করছি এ বছর রোপা আমন ধানের ফলন ভালো হবে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুন্দরভাবেই বেড়ে উঠছে আমন ধান। এতে এ বছর আশানুরূপ ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকদের পাশে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে সবসময় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।
অপরদিকে জেলার সরিষাবাড়ীতে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে এমনটাই আসা কৃষকদের। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চলতি আমন মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে ব্রি-৭৫ জাতের ধান সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ অতিরিক্ত করা হয়েছে।
আওনা ইউনিয়নের কাবারিয়াবাড়ী গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক ময়নাল হক বলেন, “আমার প্রজেক্টে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো সমস্যা না হয় পানি সেচ দিতে পারলে আল্লাহর রহমতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।”
কৃষক আছমত আলী ও কাশিনাথপুর গ্রামের কৃষক হারুনুর রশিদ বলেন, জমিতে সঠিকভাবে পানি সেচসহ পরিচর্যার ফলে এ বছর ভালো ফলন হবে বলে আশা করা যায়। একই কথা বলেন পিংনার মেদুর গ্রামের আরশেদ আলীও।
সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপ কুমার সিংহ বলেন, “উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সর্বদা মাঠে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করছেন এবং ফসলের রোগ-বালাই দেখে পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করি, আমন ধানের উৎপাদন ভাল হবে।”