• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেন কৃষকের মেয়ে যূথি


শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেন কৃষকের মেয়ে যূথি
বাবা-মায়ের সঙ্গে উম্মে হানী যূথি। ছবি : প্রতিনিধি

ছোটবেলা থেকেই যূথির স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। চরাঞ্চলের নিম্নবিত্ত একটি কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠায় যূথির স্বপ্নটা ছিল খুবই কঠিন। সংসারের অভাব অনটনে মেয়ের স্বপ্ন পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন বাবা-মা। পরিবারের সহযোগিতা আর কঠোর পরিশ্রমে যূথি পেয়েছেন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ। পৌঁছেছেন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উম্মে হানী যূথির বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের লালু বেপারী কান্দি গ্রামে। বাবা হাবিব মালত পেশায় কৃষক আর মা হাফেজা বেগম গৃহিনী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে যূথী মেজো। ছোট বেলা থেকেই ভিষণ মেধাবী তিনি। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় খাস গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর ২০২১ সালে চরকুমারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। যূথী এই সাফল্য ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখেন উচ্চ মাধ্যমিকেও। ২০২৩ সালে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে  জিপিএ-৫ পান তিনি। উম্মে হানী যূথি শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর শুরু হয় তার স্বপ্ন ছোঁয়ার লড়াই। দিন রাত এক করে শুরু করেন পড়াশোনা। চিকিৎসক হতে অংশ নেন মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায়। টিকেও যান তিনি। এমবিবিএস পরীক্ষার মেধা তালিকায় ৩ হাজার ১৪৫তম স্থানে জায়গা করে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যান ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।  

এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা হয় উম্মে হানী যূথির। সংবাদ প্রকাশকে যূথী বলেন, “ছোটবেলা থেকেই দেখতাম বাবা আমাদের পড়াশোনা করানোর জন্য ভীষণ পরিশ্রম করতেন। রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমাদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাবার যোগ্য মেয়ে হয়ে উঠব, বাবার এই পরিশ্রম বৃথা যেতে দেবো না। সেই সময় থেকে স্বপ্ন দেখতাম চিকিৎসক হওয়ার। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার সময় আমি অনেক পড়াশোনা করেছি। যখন ভেঙে পড়তাম তখন বাবা মায়ের কষ্টের কথা মনে হতো। তখন আবার নিজেকে শক্ত করতাম। আমাকে যে চিকিৎসক হতেই হবে। তাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছি।”

যুথি আরও বলেন, “আমাদের চরাঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষ নিন্মআয়ের, যারা প্রধানত কৃষি নির্ভর। তাদের পক্ষে ভালো চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। আমি চাই একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে।“

যূথির বাবা হাবিব মালত বলেন, “মেয়ের সাফল্যে আমি খুব আনন্দিত। কৃষি কাজ করে অনেক কষ্ট করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। যখনই শুনেছি আমার মেয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে, মেয়ের সাফল্যে সেই কষ্ট ভুলে গেছি। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া রাখবেন, ও যেন ডাক্তার হয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারে।”

যূথির মা হাফেজা বেগম বলেন, “সব সময় মেয়েদের সময় দিয়েছি। ওদের পড়াশোনায় যাতে কষ্ট না হয়, ভোরে উঠে ওদের রান্না করে দিতাম। সেই খাবার খেয়ে ওরা পড়তে যেত। সব সময় খেয়াল রাখতাম ওরা ঠিকঠাক পড়াশোনা করত কিনা। সেই শাসন আজ কাজে লেগেছে। আমার মেয়ে উম্মে হানী যূথি আজ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।” 

চরকুমারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিমউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, “উম্মে হানী যূথি স্কুল জীবন থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিল। ও আমাদের এই প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিকে এ প্লাস পেয়েছে। এ বছর ও মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে, আমরা শিক্ষক হিসেবে ওকে নিয়ে গর্বিত।“

ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, “যূথি এক সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। সে এ বছর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি ভীষণ খুশি। যাদের বাবা মা ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আন্তরিক, তাদের সন্তানরা সব সময় ভালো করে। আমরা সবাই যূথির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। সে যেন চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারে।”

Link copied!