ফরিদপুরের চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কৃষাণ-কৃষাণীদের মধ্যে গামবুট বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের এমন উপহার পেয়ে খুশি চাষিরাও।
রোববার (৩০ জুন) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চত্বরে ফরিদপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলখ্যাত নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের দুই শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণীদের হাতে গামবুট তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
গামবুট নিতে আসা চাষি রাশেদ শেখ বলেন, “এতদিন সাপের ভয়ে ক্ষেতে যেতে পারিনি। অনেক ফসল এর মধ্যেই ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া শ্রমিকরাও ভয়ে ক্ষেতে নামছিল না। গামবুট পেয়েছি এখন নিশ্চিন্তে ক্ষেতে যেতে পারবো, ক্ষেতের ফসল তুলে ঘরে আনতে পারবো।”
রোকেয়া বেগম বলেন, “নদীর পাশেই আমাদের বাড়ি। সাপের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি না। জেলা প্রশাসক স্যার আমাদেরকে গামবুট দিয়েছেন, এখন গামবুট পড়ে ক্ষেতে যেতে পারবো। চলাচলেও কোনো সমস্যা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “স্বামী-সন্তানরা মিলে আমরা সবাই তিল ক্ষেতে কাজ করি। তবে সাপের ভয়ে ক্ষেত থেকে তিল তুলতেই পারিনি এখনো। ক্ষেতের মধ্যেই তিল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এখন ক্ষেতে যেতে সমস্যা হবে না।”
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “কৃষকদের সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে গামবুট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সচেতনতায় মাইকিংসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সাপে কাটার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুদ করা হয়েছে। চরাঞ্চলের কোনো চাষিকে সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে আনার জন্য স্পিডবোটের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন কৃষকদের পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
গামবুট বিতরণের সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়াছিন কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাসনীম, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ফরিদপুরের চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সাপের কামড়ে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ফলে আতঙ্কে ক্ষেতে যাচ্ছে না কৃষক-কৃষি শ্রমিক। এতে ক্ষেতেই অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চরাঞ্চলের চাষিদের মধ্যে গামবুট বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে বলেও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।