বৈশাখের শুরুতেই কুড়িগ্রামে বেড়েছে তীব্র দাবদাহ। দাবদাহের ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। ভ্যাপসা গরম আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ কুড়িগ্রামের জনজীবন।
কুড়িগ্রামে এক সপ্তাহ ধরে দিনে ও রাতে প্রতি এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং চলছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন জেলা শহরের বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ-সংকটে ঈদের মৌসুমে বিপণিবিতানগুলোতেও দুর্ভোগে পড়ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ভ্যাপসা গরমে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
জেলা শহরের সার্দ্দির মোড়ের বাসিন্দা মো. ফারুক মিয়া বলেন, “গতকাল বিকেল ৫টার সময় বিদ্যুৎ চলে গেছিলো। রাত ৯টার দিক আসছিলো। আবার রাত সাড়ে ১০টার দিক গেছিলো। রাত সাড়ে ১১টার দিক আসছিলো। এভাবে পরপর লোডশেডিং হলে গরমের মধ্যে থাকা খুব কষ্টকর।”
শহরের গাড়িয়ালপাড়ার বাসিন্দা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আজ সাহরি খাবার খাওয়ার সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে ফজরের নামাজ পড়ার সময় ছিল। আবার বিকেল ৫টার দিক বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে ইফতারের পরে।”
কুড়িগ্রাম সাগর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. আরিফ বলেন, “কয়েক দিন ধরে দিনে ও রাতে প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল রাতে পর পর ৩-৪ বার লোডশেডিং হয়েছে। এভাবে গরমে ব্যবসা করা খুবই কষ্ট হয়েছে।”
লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা গরমে চরম বিড়ম্বনা সহ্য করছেন। রোগীরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সময়মতো করতে পারছেন না। জেনারেটর ব্যবহার করে কম শক্তির যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব হলেও বিদ্যুতের অভাবে ভারী শক্তির যন্ত্র ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা মোছা. মরিয়ম বেগম বলেন, !আমার চার বছরের বাচ্চাকে নিয়ে আসছি শিশু ডাক্তারের কাছে। একদিকে কারেন্ট নাই সকাল থেকে, অন্যদিকে এই রুমের সামনে ফ্যান নাই। এতগুলো অভিভাবক এই গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
হাসপাতালের দ্বিতীয়তলায় চিকিৎসারত রোগীর স্বজন জ্যোৎস্না বেওয়া বলেন, “সকাল থাকি কারেন্ট নাই। রুমের বাইরে গাছের বাতাসও নাই। হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছি। খুব গরম বাবা।”
রোববার (১৬ এপ্রিল) কুড়িগ্রাম জেলা শহরে সরেজমিনে দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম পৌরসভার গাড়িয়াল পাড়া, পুরাতন থানাপাড়া, জিয়া বাজার ও ভরষার মোড় এলাকায় ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা, সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট, দুপুর ১টা ৩৩ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ১৩ মিনিট ও বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট থেকে ৬টা ১৫মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিলো না। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ ও সদর হাসপাতাল এলাকায় সারা দিনে একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে।
নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কমে যাওয়ায় এবং একেক সময় একেক পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়ায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে প্রতিদিন গড়ে ফিডার প্রতি ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। দিনের বেলা অনেক সময় চাহিদার মাত্র ৫০ ভাগ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পিক আওয়ারে লোড কন্ট্রোল করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নেসকো আরও জানায়, কুড়িগ্রাম শহরে তাদের আওতাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহ অঞ্চলকে ৮টি ফিডারে ভাগ করা হয়েছে। এই আট ফিডারে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে দুই দিন ধরে নেসকো ৫ থেকে সাড়ে ৬ মেগাওয়াট বরাদ্দ পাচ্ছে। ফলে ঘাটতি পূরণে তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
নেসকো, কুড়িগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী মো. সাদাকাতুল বারী বলেন, “রোববার দুপুর পর্যন্ত আমাদের চাহিদা ছিল সাড়ে ৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৫ মেগাওয়াট বরাদ্দ পেয়েছি। এরপর সন্ধ্যা থেকে পিক আওয়ার শুরু হলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। একেক সময় একেক রকম বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে যখন যে রকম বরাদ্দ, ঠিক সে রকম সরবরাহ করতে হচ্ছে।”
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে অবস্থিত কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিন মিয়া জানান, রোববার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ছিল ৪৬ শতাংশ। কুড়িগ্রামে আরও এক সপ্তাহ তাপদাহ থাকতে পারে।