ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে নারকেল গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী শারমিন আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে মো. হায়দার আলীর সঙ্গে প্রায় ১৭ বছর আগে শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়। সাবিনা আক্তার ও জাহিদা হাসান নামে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। হায়দার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। ৯ মাস আগে হায়দার দেশে আসেন এবং পরে সৌদি আররে চলে যান। শারমিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মধ্যপাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করেন। তবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে শারমিনের ঝগড়া হতো।
এরই জেরে সোমবার বিকেলে শারমিনের ভাসুরসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন ঝগড়ার একপর্যায়ে তাকে একটি নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। এ সময় তার দুই সন্তানকেও মারধর করা হয়। মারধরের ঘটনাটি স্থানীয়রা ভিডিও করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন। তাতে দেখা যায়, অভিযুক্তরা শারমিনসহ তার সন্তানদের মারধর করছেন। পরে ভাসুর মঙ্গল মিয়া নারিকেল গাছে শারমিনকে বেঁধে মারধর করেন।
শারমিনের মা নূর জাহান বেগম বলেন, “কোনো নারীকে এভাবে গাছে বেঁধে পেটানো হবে? এটা কোন দেশের আইনে আছে? আমি আমার মেয়ের নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
ভুক্তভোগী শারমিন আক্তার বলেন, “শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার স্বামীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছিল কিন্তু সেই টাকা তারা ফেরত দেননি। আমার স্বামী বারণ করায় আমি তাদের কাছে টাকা চাইনি। কিন্তু শ্বশুর-ভাসুরসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত ঝগড়া করায় আমি সোমবার বিকেলে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় দুই ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনসহ জা ও ভাতিজারা এসে আমাকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করে গাছে বেঁধে রাখেন। গ্রামের মানুষ তাদের নিষেধ করলেও তারা তা শুনেননি। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য এসে আমাকে উদ্ধার করেন। পরে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এ ঘটনায় আমি মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীন, মর্জিনা ও ময়না বেগম, জুবায়ের, আকাশ ও সাইফুলকে আসামি করে রাতেই থানায় অভিযোগ দেই। আজ মঙ্গলবার সকালে মামলা নথিভুক্ত হয়। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।”
সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিপন মিয়া বলেন, “শুনেছি শারমিন তার শ্বশুরকে মারধর করেন। এরই জেরে তারা শারমিনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন। তবে আমি খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে যাই ও শারমিনকে উদ্ধার করি। তবে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত ঘৃণ্য।”
তবে শারমিনের শ্বশুর মন্তাজ মিয়া দাবি করে বলেন, “শারমিন বিভিন্ন সময় ঘরে তালা দিয়ে বাইরে চলে যেত। তাকে নিষেধ করায় শারমিন আমাকে মারধর করে। এরই জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, “পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে শারমিনের ভাসুররা তাকে গাছে বেঁধে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”