“আমারা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের ভাষার মাস। আর ভাষার মাসে উজ্জ্বল একটি প্রতিরূপ হলো শহীদ মিনার। শহীদ মিনার আমাদের গর্বের একটি জায়গা। রফিক, সালাম, বরকতসহ আরও অনেকের যে আত্মত্যাগ, তা বিশ্বে অনন্য। শুধু ২১ ফেব্রুয়ারিই নয়, আমাদের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তই ভাষা দিবস।”—কথাগুলো সংবাদ প্রকাশকে বলেছিলেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মিঠুন বসাক।
শুধু মিঠুন নন, তার মতো অনেকেই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করেন ভাষা আন্দোলনের কথা। চোখের পলকে মনের তুলিতে এঁকে ফেলেন সেদিনের ভাষা আন্দোলনের চিত্র। মিঠুনের মত দিনাজপুরবাসীর অনেকেই মনে করেন ভাষা আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশের যে গৌরবময় ইতিহাস, তা বিশ্বে নজির বিহীন। তবে আক্ষেপও কিছু কম নয়। কেননা সর্ব উত্তরের জেলা দিনাজপুরও ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল।
দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও গবেষক মোজাম্মেল বিশ্বাসের লেখা ‘দিনাজপুরে ভাষা আন্দোলন’ বইটি থেকে জানা যায়, দিনাজপুরের ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা হাজি মোহাম্মদ দানেশ, গুরুদাস তালুকদার, অনিল রায়। এ সময় চলমান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন দিনাজপুরের কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার যে অপ্রয়াস শুরু হয়েছিল, তা সারা বাংলার মানুষের মতো দিনাজপুরবাসীও মেনে নিতে পারেনি।
দীপঙ্কর রায় নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “শহীদ মিনার আমাদের একটি আলাদা অনুভূতির জায়গা। আমাদের কলেজের একটি শহীদ মিনার আছে। কলেজে এলে শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়াই। মাতৃভাষা দিবস কি শুধুই ২১ ফেব্রুয়ারিতেই। আমি মনে করি আমরা যখন কথা বলছি তার অবদান ভাষা সৈনিকদের। তাই প্রতিটি দিন আমার কাছে মাতৃভাষা দিবস।”
অর্পিতা দাস বলেন, “এই বাংলা আর বাঙালি যত দিন আছে, ততদিন রফিক, সালাম আর বরকত বেঁচে থাকবেন সকলের অন্তরে। অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই বেদিতে জুতা পরে উঠেন। আমার মনে হয় এই বিষয়টিতে নিজে থেকে সচেতন হওয়া উচিৎ। কারণ ভাষা সৈনিকরা আমাদের শ্রদ্ধার ব্যক্তিত্ব।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পৌর মেয়র সফিকুল হক ছুটু বলেন, “বর্তমান চেতনাবোধ হয়তো আর হৃদয় থেকে আসে না। শুধু কণ্ঠ থেকে আসে। ২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে একটা সময় বাড়ি থেকে খালি পায়ে আসত। কিন্তু এখন একহাতে জুতা আর এক হাতে ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে ওঠে। এমন তো কথা ছিল না। আমাদের মাতৃভাষাকে ফিরে পাওয়ার যে গৌরবময় ইতিহাস, তার শ্রদ্ধাবোধের প্রাপ্য স্থানটি ঠিক স্থানে রাখতে হবে আমাদের।”
গবেষক মোজাম্মেল বিশ্বাস বলেন, “ভাষা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল দিনাজপুর অঞ্চল। সেই সময় ঢাকায় যেমন শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল, রাজশাহীতে হয়েছিল। তেমনিভাবে দিনাজপুরেও হয়েছিল। শুধু একটি দিনেই নয়, বরং প্রতিটি দিন আমার মাতৃভাষা দিবস। আমরা প্রতিটি দিন ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করব।”