• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৪৯ বছর পর মায়ের কোলে ফিরলেন এলিজাবেথ


মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
৪৯ বছর পর মায়ের কোলে ফিরলেন এলিজাবেথ
৫০ বছর পর মায়ের সঙ্গে এলিজাবেথ

দেড় মাস বয়সে মায়ের কোল থেকে নরওয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন এলিজাবেথ ফিরোজা। ৫০ বছর পর স্বামী হ্যানরিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ফিরলেন মায়ের কাছে। যদিও জন্মদাত্রী মাকে খুঁজে পেতে এলিজাবেথের এ যাত্রা মোটেই সহজ ছিল না।

২১ মার্চ এলিজাবেথ নরওয়ে থেকে ঢাকা আসেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে সমাজসেবা অফিসে পুরোনো নথি থেকে তার বাবা-মার ঠিকানা খুঁজে বের করেন। এর পর তিনি ঢাকা থেকে মাদারীপুরের শিবচরে ভাতিজা সেলিম সরদারের বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে মায়ের সঙ্গে দেখা হয় এলিজাবেথ ফিরোজা ও তার স্বামীর। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার সকালে শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের সরদার বাড়িতে দেখা মেলে মা-মেয়ের। মা ফিরে পান বুকের মানিককে। আর এলিজাবেথ পান তার মাকে। যেন এক আনন্দের মিলনমেলা শুরু হয়। অতি আনন্দে দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এলিজাবেথ তার মায়ের জন্য নতুন জামা, কসমেটিক্সসসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় একটি বাজার থেকে চাল, ডাল, চিনি, দুধ আটা-ময়দা সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দিয়ে যান। আর নরওয়ে থেকে মেয়ে এলিজাবেথ যেন তার মাকে দেখতে পারেন সেজন্য একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনে দেবেন বলে জানান। কিন্তু কেউই কারও মুখের ভাষা বুঝতে পারছে না। কেবলই আবেগ-অনুভূতি দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ওইদিন বিকেলে আবার স্বামীসহ ঢাকা ফিরে যান এলিজাবেথ ফিরোজা।

এলাকাবাসী জানান, শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচরের গ্রামের বছির সরদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ঢাকা বসবাসকালে ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই ননদের বাসায় মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখেন মৌসুমী। সেই সময় ফিরোজা বেগমের আর্থিক অভাব অনটন ও অসুস্থতার কারণে মৌসুমীকে মোহাম্মাদপুরের সমাজকল্যাণ পরিচালকের কাছে দত্তক দেন। তৎকালীন সমাজসেবিকা রওশন জাহান শিশুটিকে (মৌসুমীকে) গ্রহণ করেন।

এলিজাবেথ এর আগেও ২০১৩ সালে নাড়ির টানে এসেছিলেন বাংলাদেশে। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে যান নরওয়ে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ফের ২১ মার্চ ঢাকা আসেন। মোহাম্মদপুরের সমাজসেবা অফিসে নথি খুঁজতে থাকেন। যেখানে তাকে দত্তক নিয়ে নরওয়ে পাঠানো হয়েছিল। এলিজাবেথের শিশুকালের পাসপোর্টের নাম ছবির সঙ্গে সমাজসেবা অফিসের নথি মিলে যায়। এর পরই শিবচরে ছুটে যান মায়ের কাছে। ৫০ বছর পর ফিরে পান মাকে।

এলিজাবেথের মা ফিরোজা বেগম জানান, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালে তার বাবা মারা যান। তখন আমার মাথার ওপর কোনো ছায়া ছিল না। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। কোনো কূলকিনারা পানি। কিন্তু কোলের মানিক রাস্তায় ফেলে আসিনি। রেখেছিলাম সরকারের কাছে। বেঁচে থাকলে একদিন দেখা পাব। এক সময় আমার কোলে আসবে এটা বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাসই তো আজ ৫০ বছর পর সত্যি ঘটল।

এলিজাবেথ ফিরোজা জানান, ছোটবেলা থেকে নরওয়ে বড় হয়েছি। নরয়েন বাবা মা নাম রাখেন এলিজাবেথ। বড় হয়ে জানতে পারি আমার জন্ম বাংলাদেশে। মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তারপর থেকেই আমি ফিরাজো নামটাকে আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করি। তবে ২২ বছর বয়সে প্রথম সন্তান প্রসবের পর সেখানকার চিকিৎসক আমার ইতিহাস জানাতে চান। তখন থেকেই আমি আমার পরিবারকে খুঁজতে চষ্টা করি। এ ব্যাপের আমার স্বামী হ্যানরি ও সন্তানরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। সেখান আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে ও নাতিন হয়েছে। 

Link copied!