দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে ঘিরে কুমিল্লার শপিং মলগুলোতে জমে উঠেছে ন বেচাকেনা। বিশেষ করে বেচাকেনা জমে উঠেছে জেলার ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়ের।
রোজার প্রথমদিকে খাদির দোকানগুলোতে ক্রেতা কিছুটা কম দেখা গেলেও শেষ মুহূর্তে এসে ঈদবাজার মাতাচ্ছে খাদি পোশাক। পছন্দ অনুযায়ী আরামদায়ক পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিস ও বাহারি ধরনের শাড়ি কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের। নগরীর বিভিন্ন শপিংমল এবং ব্র্যান্ডশপের শোরুমের পাশাপাশি খাদি পোশাকের দোকানগুলোতেও পাল্লা দিয়ে হচ্ছে বিকিকিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক রুচিশীল পোশাক তৈরি করে আনা হয়েছে। মিহি সুতার সঙ্গে মোটা সুতার বেন্ড এবং খাদির সঙ্গে রকমারি সুতার চেক বুনে কাপড়েও বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। আবার ব্লক দিয়েও তৈরি করা হয়েছে সুন্দর পোশাক। দামও ধরা হয়েছে মোটামুটি ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।
এবারে খাদি পোশাকগুলোর মধ্যে সাদা ও রঙিন পাঞ্জাবি সর্বনিম্ন ৫৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৩০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, শর্ট ফতুয়া ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা, শাড়ি ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, শার্ট ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দামে মিলছে।
ফারজানা আক্তার নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার পরিবারের চার সদস্যের সবার জন্যই খাদি কাপড় কেনা হয়েছে। এবার দামও নাগালের মধ্যে।”
খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী সুনীল কুমাার সাহা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “একসময় খাদি কাপড় অনেক ভারি ছিল। এখন ওই কাপড় প্রতিনিয়ত মিহি করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম এখন খাদি নিয়ে ভাবছে এবং গবেষণা করছে। এদের হাত ধরেই খাদি কাপড় এবং এর তৈরি পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার নকশায় বৈচিত্র্য আসছে।”
বর্তমানে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খাদি কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। কুমিল্লার খাদি কাপড়ের কদর বাড়তে থাকায় এবারের ঈদে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো খাদি কাপড়ের পোশাক নির্মাণে বিশেষ নজর দিচ্ছে, আনছে নিত্যনতুন ডিজাইনের খাদি কাপড়ের পোশাক।
কুমিল্লা মহানগরীর কান্দিরপাড়, মনোহরপুর ও রাজগঞ্জে প্রায় শতাধিক দোকানে খাদির বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে খাদির পাঞ্জাবি, ফতুয়ার থ্রিপিস ও শাড়ির বেশ চাহিদাও রয়েছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বিক্রি তত বাড়ছে বলে জানিয়েছেন দোকানীরা।
শহরতলী শাসনগাছা থেকে সহপরিবারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আনিসুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কুমিল্লার খাদির অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। কাপড়ও পড়তে অনেক আরামদায়ক। তাই খাদি কাপড় কিনতে এসেছি পরিবার নিয়ে। শেষের দিকে কেনাকাটার ভিড়টা বেশি থাকে, তাই এখন শপিংটা সেরে নিচ্ছি। আশা করি এবারের ঈদটা সুন্দরভাবে কাটাতে পারব।”
এদিকে ঈদ উপলক্ষে ক্রেতারা যেন নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারে এ জন্য কুমিল্লা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি মার্কেটে পর্যাপ্ত পুলিশ টহল দিচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, “এবার ক্রেতারা নির্বিঘ্নে ঈদশপিং করতে পারবে। আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। যানজট নিরসনে আমাদের ট্রাফিক বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজ করছে।”