• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ড. তাহের হত্যা : দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৩, ১০:১২ পিএম
ড. তাহের হত্যা : দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরের ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে রাজশাহী কারা কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কারাগারে একসঙ্গে দুইজনেরই ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

রায় কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল বলেন, “হত্যা মামলার দুই আসামি অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের পর মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। পরে কারাবিধি মেনে মরদেহ দুই পরিবারের কাছে হস্তান্তর হবে।”

ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র যে সুপার আব্দুল জলিল, জেলার নিজামুদ্দিন। এছাড়াও কারা কর্তৃপক্ষ আট জনের দুটি মেডিকেল টিম তৈরি করেছিল। যার একটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডা. মিজান উদ্দিন, আরেকটির নেতৃত্বে ছিলেন ডা. জোবায়ের আহমেদ।

এর আগে, রাত নয়টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছন ফটক দিয়ে প্রশাসনের চারটি গাড়ি প্রবেশ করে।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জানা গেছে, একই মঞ্চে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কয়েকদিন আগে প্রস্তুত করা হয়েছিল ফাঁসির মঞ্চ। ফাঁসি কার্যকর করতে আটজন জল্লাদের একটি টিম গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ।

এর আগে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টার দিকে দুই আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে ৩৫ জন সদস্য তাদের সঙ্গে শেষবার দেখা করেন।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, “গত রোববার কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছিল। রিট পেন্ডিং থাকায় আমরা তখন দেখা করিনি। রিট নিষ্পত্তি হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে দেখা করেছি। আমাদের পরিবারের ৩৫ জন এসেছিলেন।”

একই দিন দেখা করেন ড. মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরাও।

মঙ্গলবার সকালে তাহের হত্যায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। দুই দিন পর অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

এরপর অধ্যাপক তাহেরের করা জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তারা বলেন, “অধ্যাপক তাহের বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন ‘অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ বাসার পেছনে নেওয়া হয়। এরপর মরদেহ গুমের জন্য জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও তার শ্যালক আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তাহেরের মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়।

২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুইজনকে খালাস দেন।

দণ্ডিত অন্যরা হলেন, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার শ্যালক সালাম। তবে ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি বিচারে খালাস পান। পরে দণ্ডিতরা হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর তাদের দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখে। এরপর আসামিদের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট।

এরপর বাকি থাকে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন আসামিরা। সে আবেদনও নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। গত ৫ জুলাই সেই চিঠি রাজশাহী কারাগারে পৌঁছায়। সবশেষে বৃহস্পতিবার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

Link copied!