চট্টগ্রামের চন্দনাইশে জমির উদ্দীন চৌধুরী (৪৩) নামে এক যুবলীগ নেতার ভয়ঙ্কর কাণ্ডে শুধু প্রতিবেশীরাই নন, বাকরুদ্ধ থানা-পুলিশ, সেনা সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও। স্ত্রীকে হত্যার পর মাকে ছুরিকাঘাত করে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ধরে আটকে রাখার ঘটনায় হতবাক হয়ে গেছেন এলাকাবাসী।
পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে জমির উদ্দীন তার স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার পর দরজা বন্ধ করে নিজের মাকে ছুরিকাঘাত করেন। আর রক্তাক্ত মা যখন ছটফট করছিলেন তখন তাকে ঘরে আটকে রাখেন। এভাবে কেটে যায় প্রায় ছয় ঘণ্টা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ, সেনা সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে ঘরের দরজা ভেঙে জমিরকে আটক করে। এরপর তার স্ত্রীর লাশ ও রক্তাক্ত মাকে উদ্ধার করে।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের উত্তর হাসিমপুর ছৈয়দাবাদ গ্রামে। বিকারগ্রস্ত যুবলীগ নেতা জমির ছৈয়দাবাদের মৃত নাসির উদ্দীন চৌধুরীর ছেলে। হত্যাকাণ্ডের শিকার জমিরের স্ত্রীর নাম বিউটি আকতার (৩৫)। তার মায়ের নাম শামসুন নাহার (৫৮)।
স্থানীয়রা বলছেন, স্ত্রীকে হত্যার পর মাকে রক্তাক্ত করে যখন সে দরজা বন্ধ করে রেখেছিল তখন কেউ সেখানে ভয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি। কারণ, প্রায় তিন মাস ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন জমির।
প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনা জানার পর খবর দেওয়া হয় থানায়। খবর পেয়ে থানা-পুলিশ ও চন্দনাইশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা অনেক সময় ধরে জমিরকে দরজা খুলতে বলে। তবে পুলিশের কথা শুনছিল না সে।
এভাবে দীর্ঘ প্রায় ৬ ঘণ্টা পর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে পুলিশ। বিউটি আকতারের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি পুলিশ আহত শামসুন নাহারকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠায়। ঘাতক জমিরকেও আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, জমির উদ্দিন তার নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে স্ত্রী বিউটি বেগমকে গলা কেটে হত্যা করেন। এ সময় জমিরের মা তার পুত্রবধূকে বাঁচাতে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে ঘরে আটকে রেখেছিল জমির।
পুলিশ বলছে, স্থানীয় লোকজন জমিরকে মানসিক রোগী বললেও, মানসিক সমস্যা নিয়ে জমিরের কাছে কোনো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি, মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণেই এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়েছেন জমির।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরান আল হোসাইন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, চন্দনাইশের দায়িত্বরত সেনাবাহিনী ও চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।