• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

হাঁস পালনে প্রতিবন্ধী আনোয়ারের আয় লাখ টাকার বেশি


জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম
হাঁস পালনে প্রতিবন্ধী আনোয়ারের আয় লাখ টাকার বেশি

পেশায় রাজমিস্ত্রি তিনি। এ কাজ করে অভাব-অনটনে চলত তার সংসার। বিয়ে করার কিছুদিন পর সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখন তার বাবা খরচের জন্য কিছু টাকা দেন। বাবার দেওয়া টাকায় ৮টি হাঁস কিনেন। একসময় ওই হাঁসগুলো ডিম দিতে শুরু করে। সেই ডিম থেকে শুরু করেন বাচ্চা ওঠানো। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তার খামার। মাসে তার আয় হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। 

এভাবেই নেশা থেকে পেশায় পরিণত হয় তার হাঁস পালন। 

যার কথা বলছি, তার নাম আনোয়ার। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আঁওড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত তছকিন উদ্দিন ধুলুর ছেলে তিনি। আনোয়ারের জন্ম একই উপজেলার পুর গ্রামে হলেও ছোটবেলা থেকে তার মামার বাড়ি আঁওড়া সোনাপাড়া গ্রামে বড় হয়েছেন।

রাজমিস্ত্রির কাজ করার পাশাপাশি আনোয়ার গড়ে তুলেছেন তার হাঁসের খামার। ২০১১ সালে মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে তার পা ভেঙে যায়। এতে তার সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। অনেক কষ্টে ঘুরে দাঁড়ান আনোয়ার। কমতি ছিল না তার স্ত্রী মর্জিনার ভূমিকাও।

আনোয়ার এখন বছরে ৭০-৭৫ দিন হাঁস পালন করেন। এ সময় বেশির ভাগ হাঁস প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে দ্রুত বড় হয়। এতে খরচা অনেক কম হয়, লাভ হয় বেশি। এ বছর ৬৫-৭০ দিনে হাঁস পালনে ৩ লাখের বেশি টাকা লাভের আশা তার।

আনোয়ার বলেন, “পা ভাঙার পরে যখন সুস্থ হলে আমার শ্যালিকা ৪০টি হাঁসের বাচ্চা পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে আয় হয় ১০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে আমি ধীরে ধীরে বেশি হাঁস তুলতে শুরু করি। অনেকেই আমাকে নিষেধ করলেও আমি শুনিনি। মিস্ত্রির কাজ করার পাশাপাশি এটি আমার বাড়তি আয় আসতে শুরু করে।”

তিনি বলেন, বছরে এ সময় একবার যখন মাঠ ফাঁকা থাকে, তখন হাঁস পালন করলে খুব ভালো লাভবান হওয়া যায়। এখন হাঁসের চাহিদা থাকে ভাল, ভাল দামও পাওয়া যায়। গত বছর ১ হাজার ২০০ বাচ্চা কেনাসহ এর পেছনে ৯০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ দিনে লাভ হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অন্য কাজ করে টাকায় এভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এ বছর খাকি ক্যাম্বেল বাচ্চা তুলেছি ২ হাজার ৮০০। এর মধ্যে ৩ লাখ টাকার হাঁস বিক্রি করেছি। আর যা আছে তাতে ২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, ২ হাজার ৮০০ বাচ্চাসহ বড় করে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৬৫-৭০ দিনে বাচ্চার ওজন হয়েছে ৮০০-১০০০ গ্রাম।

কোনো ব্যক্তি খাকি ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা কিনে পালন করতে চায় তাদের বর্ষা মাসে মাঠ খালি থাকার সময় বাচ্চা কিনে পালন করার পরামর্শ দেন। এতে খরচ হবে কম লাভ হবে অনেক বেশি।  

আনোয়ার বলেন, “আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে খামারটি অনেক কষ্টে তুলেছি। কিন্তু, এর পেছনে আমি সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। যদি পাই তাহলে খামারটিকে আরও সুন্দর এবং বড় করতে পারব। হয়তো-বা তখন আমার খামার থেকে অনেকের বেকারত্বের দুয়ার খুলে যাবে।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বলেন, “ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ খামারি যারা আছে, সরকারি যে সুবিধা আছে সেটা আমরা দিয়ে থাকি। আমাদের ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার মাঝে মাঝে প্রণোদনা দেয় সেটা আমরা খামারিদের মাঝে পৌঁছে দেই। তবে খামারিকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে এসে আমরা ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করে হয়তো লোন উত্তোলন করে দিতে পারি।”

Link copied!