দিনাজপুর জেলায় যে কয়টি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র রয়েছে, তার মধ্যে একটি ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। অনেক পুরোনো এই সেবাকেন্দ্রটি সবার কাছেই পরিচিত সদর হাসপাতাল নামে। চিকিৎসাসেবার মানের দিক থেকে রোগীদের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে জনবলসংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে এর চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটিতে আরও ভর্তি হন প্রায় শতাধিক রোগী। প্রতিষ্ঠানটির ৬০টি শূন্য পদের বিপরীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন ৩১ জন।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে তিন দিন একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ এসে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। আর নার্সের সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। অপর দিকে প্রতিষ্ঠানটিতে সার্জারি, মেডিসিন, নিউরো-মেডিসিন, অর্থোপেডিক সার্জারি, চক্ষু, শিশু, গাইনি ও প্রসূতি বিভাগ চালু আছে। নেই নাক-কান-গলা, চর্ম-যৌন, হৃদরোগ বিভাগ এবং এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নার্সের সংকট না থাকলেও রয়েছে চিকিৎসকের সংকট। তাদের মতে, চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানো গেলে সেবার মান আরও উন্নত হবে।
চিরিরবন্দর উপজেলার ভূষি বন্দর এলাকা থেকে আসা মনিরা পারভিন ভর্তি আছেন মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে। কথা হলে তিনি বলেন, “এখানে ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহার অনেক ভালো। ওষুধপত্র সবই ঠিকমতো পাইছি। কিন্তু ভর্তি হয়ে সিট (শয্যা) পাইনি। এখানে অনেক দূরের রোগীরা আসে। অনেক চাপও হয়। সরকার এবং এখানকার ডাক্তারদের কাছে একটাই চাওয়া আমার, যদি হাসপাতালটিতে সিটের সংখ্যা বাড়ানো যায়। তবে আমার মতো অনেক রোগী হয়তো সিটের সুবিধাটা ভালোভাবে পাবে।”
বীরগঞ্জ থেকে আসা ফরিদুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাগিনার ডায়রিয়া হয়েছিল। পরিবারের কথাতে সদর হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেদিন একজন ডাক্তার দেখে গেছে। তারপরে আর আসে নাই। কিছুক্ষণ আগে একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছে। দুই দিনে বাচ্চাটা সুস্থ হয়েছে, চিকিৎসা ভালো। আমরা ভাবছিলাম আরও ডাক্তার আসবে। কিন্তু কোনো ডাক্তার আসেনি। আমার মনে হয় ডাক্তার-সংকট আছে। ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ালে ভালো হয়।”
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ফজলুর রহমান বলেন, “এই হাসপাতালটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। এখান থেকে আমরা প্রায় ৯৫ শতাংশ ওষুধপত্র সরবরাহ করতে পারি রোগীদের। এখানে স্বল্প খরচে রোগীরা অপারেশন করাতে পারে।”
ফজলুর রহমান আরও বলেন, “আমাদের একটু জনবলের সংকট আছে। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। আমার এখানে নাক কান গলা, চক্ষু, হৃদরোগ এবং চর্ম-যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। তাই এই ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেডিকেল অফিসারের পদ অনেকগুলোই ফাঁকা আছে। সর্বমোট ৬০টি পদের মধ্যে ৩১টি পদ পূর্ণ আছে।”