ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে ধলারমোড়ের নিকট পালডাডাঙ্গীতে পদ্মা তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে একরাতের মধ্যেই শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন দশ-বারোটি বসতবাড়ি ধসে গেছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধ তীব্র ঝুঁকিতে পড়েছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গীতে গিয়ে দেখা যায়, শহররক্ষা বাঁধের পাশে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। আর সেখানে সরকারি বালুমহাল না থাকলেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি তুলে গড়ে তোলা হয়েছে বালির বিশাল মজুত।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে শহররক্ষা বাঁধ ঘেষে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালি তুলে বালির ঢিবিতে মজুত করা হয়। এরপর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে ভেকু দিয়ে ওই বালি ট্রাকে করে বিক্রির সময় শহররক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় পানির স্রোতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে ভোর হওয়ার আগেই আফজাল শেখ, মজলু শিকদার, মো. হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ, আলী, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ, জাহানারা বেগমের ঘরবাড়ি নদীর পানিতে ধসে যায়। বাড়িঘর ছাড়াও বাঁশবাগান ও বেশকিছু গাছপালাও পানিতে ধসে গেছে। পালডাঙ্গী মামুনের দোকানের নিকট ভাঙন একেবারে শহর রক্ষা বাঁধ পর্যন্ত চলে এসেছে।
ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মো. হাসান মাস্টার বলেন, “৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা এই বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে এসে আশ্রয় নেই। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। কিন্তু স্থানীয় আজম নামে এক ব্যক্তি এখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলে বিক্রি করছে। শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলার কারণে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করায় উল্টো হুমকি দিচ্ছে তারা।”
আফজাল শেখ বলেন, “রাতের বেলায় ভেকু দিয়ে লেয়ার ধরে বালি তুলে নিয়ে যায়। তার জন্য আমাদের ঘর-দুয়ার সব ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে। পায়খানা পেসাব করব সেই কায়দাও নাই। টিউবওয়েল নাই, পায়খানা নাই, রান্নার জায়গাও নাই। সব ভাইঙ্গা নিয়া গেছে।”
মজনু শিকদার বলেন, “বেড়িবাঁধ থেকে দেড়শ ফুট জায়গা সরকারের। আমরা প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার এখানে বাড়িঘর তুলে বসবাস করি। এই সরকারি জায়গায় পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালি তুলে নিয়েছে। একারণে এভাবে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই বেড়িবাঁধও ভাঙার উপক্রম।”
ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির বলেন, “অনেকদিন ধরে তারা মানুষের ক্ষতি করছে। যখন আমরা অভিযোগ দেই, তারপর দুই তিন দিন হয়তো বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু হয়। তবে এইবার তারা যা করছে তাতে বেড়িবাঁধ ধরে গেছে। আর মাত্র চার-পাঁচ ফুট ভাঙলেই শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন ধরে যাবে।”
এ ব্যাপারে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে। আর সেখানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।