শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ও দৃষ্টিনন্দন কাশবন যেন জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। দেবীর আগমনকে ঘিরে ইতিমধ্যে ব্যস্ততার দিন পার করছেন কারিগররা। তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একটু একটু করে সেজে উঠছেন দেবী দুর্গা। আর তিন সপ্তাহ পেরোলেই দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।
সোমবার (২ অক্টোবর) সকালে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের বেশ কয়েকটি কুমারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমা কারিগররা পার করছেন ব্যস্ত সময়। একেকজন কারিগর এ বছর ১০-১৫টি করে প্রতিমার অর্ডার নিয়েছেন, যা গত বছরগুলোতে ছিল ২০-২৫টি করে। জেলার বাইরে থেকে প্রতিমার অর্ডার পেলেও গত বছর থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে লাভ কম হলেও উৎসব কমিটির চাহিদা মতো প্রতিমা গড়ছেন তারা আপন হাতের ছোঁয়ায়। পাশাপাশি পূজার মাটির সরঞ্জাম হাঁড়ি, কলস, ঘট, সরা, প্রদীপ ইত্যাদিও গড়ছেন কারিগররা। জেলার কাঁঠালবাড়ি, দাশেরহাট, রাজারহাটের বৈদ্যের বাজার, ঘোগাদহের সোবনদহ, পৌরসভার পালপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে এসব মাটির সরঞ্জাম ও দেবীর প্রতিমা।
প্রতিমার লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, ময়ূর, পেঁচা সবকিছু তৈরি প্রায় শেষ হয়েছে। তবে মূল প্রতিমা দেবী দুর্গার কাজ এখনো বাকি রয়েছে। এসব প্রতিমাতে এখন মাটির প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে, রং তুলির আঁচড় পড়বে ১৪ অক্টোবর শনিবার মহালয়ার পর।
প্রতিমা কারিগররা প্রতিমার কাঠামোর উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে ২২ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় এ বছর প্রতিমার অর্ডার নিচ্ছেন। তারপরও খরচের তুলনায় দাম না পাওয়ার আক্ষেপ করছেন অনেকেই।
ঘোগাদহ ইউনিয়নের সোবনদহ গ্রামের কারিগর শ্রী গণেশ মালাকর বলেন, “প্রতিমা তৈরির খড়, বাঁশ, কাঠ, রং, সুতাসহ সব সরঞ্জামের দাম গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেড়েছে। সেই তুলনায় প্রতিমার দাম তেমন পাচ্ছি না আমরা। খরচ বাদ দিয়ে তেমন কিছুই থাকছে না।”
সদরের দাশের হাট গ্রামের প্রতিমা কারিগর শ্রী জয় গোবিন্দ মোহন্ত বলেন, “এ বছর প্রতিমার সরঞ্জামের খুব দাম। জেলার বাইরের পূজার প্রতিমার তেমন অর্ডার নিতে পারিনি। দামে মেলে না। রাত-দিন পরিশ্রম করে প্রতিমার খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খাচ্ছি। জিনিসপত্রের দাম হিসেবে কমিটির লোকজন প্রতিমার দাম দিতে চায় না।”
রাজারহাটের বৈদ্যের বাজারের প্রতিমা কারিগর তপন চন্দ্র মালাকার বলেন, “বংশপরম্পরার পেশা ছাড়তেও পারি না। কোনোমতে আঁকড়ে ধরে আছি। প্রতিমা মালাকরদের কেউ খোঁজখবর নেয় না। প্রতি বছর পূজার সময় এলে কয়টা টাকার মুখ দেখি। মহালয়ার আগে প্রতিমা রেডি করতে হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।”
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদ জানায়, জেলায় এবার ৫৪০টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয়া দুর্গোৎসব। যা গত বছরের চেয়ে ২৬টি বেশি। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে ৭৫টি, উলিপুরে ১১৫টি, চিলমারীতে ৩৫টি, রৌমারীতে ৫টি, রাজিবপুরে ১টি, নাগেশ্বরীতে ৯৫টি, ভূরুঙ্গামারীতে ১৯টি, ফুলবাড়ীতে ৭০টি ও রাজারহাটে ১২৫টি।
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী রবি বোস বলেন, “২১ সালে কুড়িগ্রামের কয়েকটি জায়গায় দুর্গাপূজার সময় প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। সেই আশঙ্কায় গত বছর গ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোর পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। সেসব এলাকাতেও পূজা হবে। নির্বাচন সামনে, আমরা একটু আশঙ্কায় আছি।”
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যে জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপের নেতৃবৃন্দর সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। পূজাকে ঘিরে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।