• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
কোটা সংস্কার আন্দোলন

সংঘর্ষে নিহত আবু ছায়েদের পরিবারে ঋণের বোঝা


পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
সংঘর্ষে নিহত আবু ছায়েদের পরিবারে ঋণের বোঝা

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন পঞ্চগড়ে বোদা উপজেলা মাড়েয়া ইউনিয়নের প্রধানহাট গ্রামের আবু ছায়েদ।

গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তা এলাকায় দোকানের জন্য পলিথিনের ব্যাগ আনতে বের হলে পড়েন সংঘর্ষের মধ্যে। এক পর্যায়ে একটি গুলি এসে লাগে আবু ছায়েদের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে সড়কে পড়ে থাকে আবু ছায়েদের প্রাণহীন রক্তাক্ত দেহ। গোলযোগের মধ্যেই প্রতিবেশিরা তার মরদেহটি দাফনের জন্য পাঠিয়ে দেন পঞ্চগড়ে। শনিবার (২০ জুলাই) সকালে বাড়ির পাশে দাফন করা হয় তাকে।

জানা যায়, ১০ থেকে ১২ বছর আগে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন আবু ছায়েদ। গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী মাজেদা বেগম, মেয়ে শাহনাজ আক্তার ও ছেলে মামুন ইসলাম থাকেন। গত দুই বছর আগে মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফিট এলাকায় ভাড়া নিয়ে একটি মুদি দোকান দেন তিনি। ঢাকা থেকে তার পাঠানো টাকায় কোনো মতে চলতো সংসার।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন দিশাহারা পুরো পরিবার। সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটের ১৫ শতক জমি, মাটির জড়াজীর্ণ ঘর। তাও এই জমির ওপরে গোপনে স্থানীয় কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ছায়েদ। ৪৫ হাজার টাকার ঋণ এখন সুদে আসলে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। ছেলে মামুনকে নিয়ে মাজেদা বেগমের এখন দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই।

নিহত আবু ছায়েদের স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, “ঢাকা থেকে আমার স্বামী যে টাকা পাঠাতো তা দিয়ে সংসার চালাতাম। ছেলের লেখাপড়াও চলতো সেই টাকায়। সে কোনো দল করত না। কিন্তু ঢাকায় কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষের সময় পলেথিন ব্যাগ আনতে সড়কে বের হলেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। বিনা কারণে নিরাপরাধ মানুষটি মারা গেল, সঙ্গে আমাদেরও দুঃখের সাগরে ফেলে গেল। এখন আমি আমার সন্তানকে নিয়ে কীভাবে চলব।”

নিহত আবু ছায়েদের ছেলে মামুন ইসলাম বলেন, “গুলিটি আমার বাবার মাথার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। আমাদের সম্পদ বলতে বাড়ি ভিটে টুকুই। তাও আবার কৃষি ব্যাংকে দায়বদ্ধ। বাবা এই জমির দলিল দিয়ে ঋণ নিয়েছে আমরা জানতাম না। এখন শুনি সুদে আসলে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কীভাবে চলব জানি না। তার ওপর এই ঋণের বোঝা।”

প্রতিবেশী মশিউর রহমান বলেন, “এই পরিবারটি খুবই দরিদ্র। তার ওপর একমাত্র উপার্জণক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। নিরাপরাধ মানুষটি গুলিতে মারা গেছে। সরকারের উচিত এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো।”

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, “আমরা জেনেছি আবু ছায়েদ ঢাকায় দোকান করতেন। পলিথিন আনতে বের হলে গুলিতে তিনি মারা যান।”

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, “সহিংসতায় পড়ে নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। ওই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

Link copied!