• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
পাবনা চিনি কল

জঙ্গলময় পরিবেশে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ


আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৩, ০৯:২১ এএম
জঙ্গলময় পরিবেশে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ

২০২০ সালে দেশের কয়েকটি চিনি কলের আখ মাড়াই বন্ধ করে দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। তিন বছর ধরে মিল এলাকায় নেই কোনো কর্ম চাঞ্চল্য। চারদিকে ভুতুড়ে পরিবেশ। আগাছা, লতাপাতায় জঙ্গলময় পরিবেশে রূপ নিয়েছে। ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশগুলো। মরচে ধরে নষ্ট হচ্ছে আখ বহনকারী গাড়িগুলো। উত্তরের জেলার অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান পাবনা চিনি কল বন্ধের ফলে একদিকে এ অঞ্চলের আখ চাষিরা হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত, অন্যদিকে সরকারের শত কোটি টাকার যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থায়নে ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুরস্থ এলাকায় ৬০ একর জমির ওপরে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই চিনি কল। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থাপনের কাজ শুরু হলেও ১৯৯৬-৯৭ সালে মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পরের বছর ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে মিলটি। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে থাকে চিনির মিল। মিলটির দৈনিক আখ মাড়াই করার ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। আখ চাষি, সুগার মিল শ্রমিক-কর্মচারীসহ নানামুখী আন্দোলন আর সংকটে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর দেশের বেশ কয়েকটি চিনি কলের সঙ্গে পাবনা সুগার মিলেও আখ মাড়াই কার্যক্রমও স্থগিত ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রণালয়।

পাবনা চিনি কলের প্রধান গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন নুরুল ইসলামের মতো আরও কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। নুরুল ইসলামের মতে, মিলটি এখন মৃত। আর এই মৃত লাশ পাহারায় রয়েছেন তার মতো কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। সহস্রাধিক মানুষের দৈনিক কোলাহল, যান্ত্রিক  শব্দ আর আখ ভর্তি যানবাহনের আসা যাওয়ায় পরিবেশটা ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। মিল বন্ধ করে দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলে গেছেন অন্য কর্মস্থলে।

একাধিক আখ চাষির সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, মিলটি বন্ধের পর থেকেই বিপাকে পড়েছেন হাজারো আখ চাষি। মিলটি ঘিরে পুরো জেলায় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার একর জমিতে আখ চাষ হতো। এইসব জমিতে এখন অন্য ফসল আবাদ করছেন চাষিরা।

পাবনা চিনিকল আখ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী বলেন, “আখ ছিল দীর্ঘমেয়াদী ও লাভজনক ফসল। আমি নিজেই অর্ধশত বিঘা জমিতে আখ চাষ করে মিলে সরবরাহ করতাম। আমার মতোই এ জেলায় ৫/৬ হাজার বিঘা জমিতে আখ চাষ করতেন চাষিরা। মিলটি বন্ধ করে দেয়ায় প্রায় ৩ হাজার আখ চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।”

পাবনা চিনি কলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, সরকারিভাবে মিলটি চালুর কোনো উদ্যোগ আপাতত না থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিভিত্তিক পার্টনারশিপে চালুর ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। মিলটি চালু করতে পারলে ভালো। শুধু চিনি উৎপাদন করে মিল পরিচালনা করা, কর্মকর্তা, শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন বহন করা সম্ভব নয়। কয়েকমাস চিনি উৎপাদন করার পর মিল বন্ধ রাখতে হয়। ফলে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যায়।  

ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতারুজ্জামান পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা চিনি কলের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “শুধু চিনি নয়, সঙ্গে অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করতে হবে। কেরু যেমন চিনির পাশাপাশি মদ এবং অন্যান্য পণ্য উপজাত হিসেবে উৎপাদন করছে। এতে তাদের বছরে শতাধিক কোটি টাকা লাভবান হচ্ছে। আমাদেরও এমন কিছু চিন্তা করেই এগুতে হবে। তাহলে মিলটি চালু করা সম্ভব।”

Link copied!