চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন আইনজীবীরা।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের ৭৪টি আদালতের কার্যক্রম। তবে সকাল থেকে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে আদালতে লাশ নিয়ে আসা হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বেশির ভাগ আইনজীবী। তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।
জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান, নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেলে নুরুল আমিন, হেফাজত নেতা হারুন ইজাহার প্রমুখ।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের কোতোয়ালি মোড়–সংলগ্ন আদালত প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন আইনজীবীরা। এতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী, পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।
এ সময় হত্যকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে পরবর্তী কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন আইনজীবীরা।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এন এম হুমায়ুন কবির বলেন, চট্টগ্রাম আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো মামলার শুনানি হচ্ছে না। দূরদূরান্ত থেকে আসা মামলার বাদী ও হাজিরার দিন ধার্য থাকা আসামিরা ফেরত যাচ্ছেন। মামলাগুলোর পরবর্তী তারিখ রাখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হল–সংলগ্ন এলাকায় সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ছিলেন।
সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে আজ সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে অবস্থিত আইনজীবী ক্লার্ক অ্যাসোয়িশনের কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুব্ধ লোকজন কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন।
একপর্যায়ে তারা সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন। চট্টগ্রাম আইনজীবী ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল ইসলাম দুপুরে বলেন, “বিক্ষুব্ধ লোকজন আমাদের কার্যালয়ের সব আসবাপত্র ভেঙে চুরমার করে ফেলে। একপর্যায়ে তারা আগুনও ধরিয়ে দেয়। আগুন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে গেছে।”
সোমবার বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রামে আনা হয়।
৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, “জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় চিন্ময় কৃষ্ণর ভক্তরা প্রিজন ভ্যানের আশপাশে অবস্থান নেন। বারবার অনুরোধ করা হলেও অবস্থানকারীরা সরে যাননি। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ডিভিশনের আদেশ দেন। একই সঙ্গে চিকিৎসা ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, কারাবিধি অনুযায়ী সে ব্যবস্থা নিতে জেল সুপারকে নির্দেশ দেন।”
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। আজ এটি শুনানির জন্য থাকলেও হয়নি। পরবর্তী তারিখ এখনো জানা যায়নি।”