কুমিল্লায় পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে না পারার অভিমানে একে-অপরকে ভিডিও কলে রেখে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন সদ্য বিবাহিত এক কিশোরী (১৬) ও তার প্রেমিক (২২)। মৃত্যুর আগে চিরকুটে তাদের একই কবরস্থানে দাফন করার অনুরোধ করে গেছেন তারা।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত ১১টায় পুলিশ স্বামীর বাড়ি থেকে নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়।
নিহত গৃহবধূর নাম খাদিজা আক্তার উর্মি। সে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানাধীন মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে। সে চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। অপরদিকে ভিডিও কলে যুক্ত থাকা নিহত ওমান প্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেন। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।
জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া (কৃষ্ণপুর) গ্রামের রং মিস্ত্রী আরিফুর রহমানের সঙ্গে খাদিজার বিয়ে হয়। বাল্যবিয়ে হওয়ায় মোবাইল কোর্ট আতঙ্কে ঘরোয়াভাবে গোপনে বিয়ের আয়োজন করা হয়।
পুলিশের উদ্ধার করা চিরকুটে লেখা ছিল, “চাইছিলাম দুজনে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিলো না, আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম, ওরেও আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা। বাবা-মা, ভাই বোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু থাকতে দেয় নাই। আমাদের দাফনটা যেন একসঙ্গে হয়। একদিন আগে-পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে।”
নিহত খাদিজার মা জানান, তার মেয়ের সঙ্গে এক প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। ১৪ অক্টোবর মেয়ের সম্মতিতেই তাদেরই এক আত্মীয়ের সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে হাসি-খুশিতেই ছিল। গতকাল রাতে হঠাৎ জানতে পারেন মেয়ে ও সেই ছেলে ভিডিও কলে একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন। মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। প্রবাসী ছেলেটাই তার মেয়ের মাথা খারাপ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রবাসী ছেলের বাবা বলেন, এক বছর আগে তিনি ছেলেকে ওমানে পাঠান। কয়েক দিন আগে শোনেন, ছেলে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। খবর নিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ছেলে অসুস্থ হয়ে যায়। গতকাল রাতে সেই মেয়ে ও ছেলে চিরকুট লিখে ভিডিও কলে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছেন।
তিনি বলেন, “আমার ছেলেসহ দুটি জীবনের আলো নিভে গেল। তিনটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এ জন্য মেয়ের বাল্যবিবাহ দায়ী। বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত নিকাহ রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করছি। আমার ছেলের চিরকুট হাতে পেয়েছি। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করব।”
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “বিয়ের ১৩তম দিনে নববধূ প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। শুনেছেন প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছেন। নববধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের পাশে হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার আগে মেয়েটি মা-বাবার উদ্দেশ্যে সেটি লিখেছিল। এ ঘটনায় নববধূর ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।”