করোনার ঘরবন্দি সময়ে শখের বশে রঙিন মাছ পালতে গিয়ে নীলফামারীর আবু রায়হান এখন সফল রঙিন মাছচাষি। বাড়ির উঠানে বাহারি রঙের বিদেশি মাছের চাষাবাদে মাসে বাড়তি আয় করছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।
নীলফামারী জেলা সদরের রামগঞ্জ বাজার এলাকার রাজ মিস্ত্রি আবুল হাশেমের ছেলে আবু রায়হান (২৫)। চার বছর আগে শখের বশে শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। শখের বশে শুরু করলেও এ সময়ের মধ্যে তরুণ এ উদ্যোক্তা পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য।
শুরুতে জেলা শহরের অ্যাকুরিয়ামের দোকান থেকে ৫০০ টাকায় ১০-১২ পিস ‘মিক্সগাপ্পি’ মাছ কিনে তা প্লাস্টিকের বালতির পানিতে রাখেন। এক মাসের মধ্যেই সেগুলোর বাচ্চা দেখা দিলে ইউটিউবে রঙিন মাছ চাষের ভিডিও দেখে প্রজেক্ট শুরু করেন। ছোট পরিসরে প্রজেক্ট শুরু করলেও বর্তমানে তার ১৮ প্রজাতির বাহারি রঙের বিদেশি মাছ ২১টি পাকা চৌবাচ্চা পুকুরে রয়েছে। তিনি বাণিজ্যিকভাবে মাছ ও পোনা উৎপাদন করে তা জেলা ও জেলার বাহিরের বিভিন্ন অ্যাকুরিয়ামের দোকানে সরবরাহ করেন।
রঙিন মাছ চাষের বিষয়ে আবু রায়হানে সঙ্গে কথা হলে সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “২০২০ সালের শুরুতে করোনা মহামারির সময়ে নীলফামারী শহরের একটি অ্যাকুরিয়াম ফিশের দোকান থেকে শখের বশে ৫০০ টাকা দিয়ে ১০-১২টি রঙিন মাছ কিনে আনি। তখন এই মাছের নামও জানতাম না আমি। সেগুলো গ্রামের বাড়িতে একটি প্লাস্টিকের বালতিতে রেখে দিই। বেশ কিছুদিন পরে জানতে পারি এগুলো ‘মিক্সগাপ্পি’ প্রজাতির ছিল। ১৫ দিন পর পানি পরিবর্তন করার সময় কয়েকটি মাছের পেটে ডিম দেখতে পাই। পরে এগুলো ডিম থেকে পোনা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ইউটিউবে স্বল্প পরিসরে রঙিন মাছ চাষের ভিডিও দেখে শুরু করি প্রজেক্ট। এরপর আস্তে আস্তে জেলা ও জেলার বাহির থেকে আনতে থাকি বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছ। একটি একটি করে বাড়াতে থাকি মাছ চাষের চৌবাচ্চা। বর্তমানে আমার এখানে ১৮ প্রজাতির বিদেশি রঙিন মাছ রয়েছে।”
রায়হান আরও বলেন, “আমার এমন কিছু করার ইচ্ছা ছিল, যেখানে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আমি দেখলাম, রঙিন মাছ চাষ আমাকে আনন্দ ও অর্থ দুটোই দিচ্ছে। তাই স্বল্প পরিসর থেকে এখন বৃহৎ পরিসরে শুরু করার চেষ্টা করছি। এ কাজে পরিবারের সবাই আমাকে সহায়তা করে। বলতে গেলে, অনেকটা খেলার ছলেই এই প্রজেক্ট শুরু করা।”
এই প্রজেক্টে খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু রায়হান বলেন, “এখন পর্যন্ত আমার এই প্রজেক্টে ২ লাখ টাকার সেটআপ আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন পোনা সংগ্রহ করা। যেমন, মিক্স গাপ্পি, শর্টটেইল, রেড টেইল, প্লাটিনাম ডাম্বু, ইয়ার অ্যালবাইনো কই, কই টক্সিডো, ব্লু হেড সামু রাই, রেড মস্কো, স্নাক স্কিন গাপ্পি, কোবরা, মিক্স গাপ্পি, সর্ট টেইল, ব্লাক বেলুন মলি, হোয়াইট বেলুন মলি, জেবরা, গ্লো টেট্রা, মুন টেইল মলি, কই কার্প, কমেট কাপ এবং মিকি মাউস প্লাটি আছে। আমার এখানে আরও ইনভেস্ট করার পরিকল্পনা আছে।”
বিক্রি ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়তান বলেন, “‘রঙিন মাছের খামার নীলফামারী’ নামে আমার নিজস্ব একটি ফেসবুকে পেজ রয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করে অনেকে আমার এখানে আসেন। পাশাপাশি নীলফামারী ও সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীরা পাইকারি নিয়ে যায়। আর দামের বিষয়ে যদি বলি, আকার ভেদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ১০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সারা দেশে অক্সিজেন ব্যাগে এসব রঙিন মাছ পরিবহনে যাচ্ছে।”