সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ২০০৯ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সে সময় প্রাণ হারান ৫৫ মানুষ। আইলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বিধ্বস্ত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা।
সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে গাবুরা ও পদ্মা পুকুর ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পরিবার জীবন যাপন করে। বছরে ৪ মাস কাঁকড়া ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। বনে যাওয়ার পাস না দেওয়া ও বাঘের আক্রমণের ভয়ে বনজীবি পুরুষরা বউ বাচ্চা রেখে বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ২০০১ সালের পর থেকে বাঘের আক্রমণে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
লবণাক্ততার কারণে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশু ও নারীরা। জরায়ুজনিত রোগে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে নারীদের গর্ভধারণে জটিলতা হওয়ায় জন্মহার কমে যাচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ইউনিয়নের পাশ্বেমারী গ্রামের মর্জিনা খাতুন বলেন, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় স্বামী ও ছেলেরা বৌ সন্তান নিয়ে পিরোজপুর ইটভাটায় গেছে কাজ করতে। বছরের ৩ মাস বাড়ি এসে বেকার বসে থাকতে হয় তাদের।
গাবুরা গ্রামের ছকিনা বিবি বলেন, “স্বামীর আয়ে সংসার চলা কষ্টকর হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আমি নদীতে জাল ঠেলি। এখানে থেকে মাছ ও কাঁকড়া ধরে বিক্রয় করি। প্রতিদিন লোনা পানিতে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়।”
একই ইউনিয়নের সোলাইমান গাজী বলেন, “আমাদের এখানে খুব সমস্যা। বিশেষ করে সুপেয় খাবার পানির কষ্ট। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে নদী ওপার ২০ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে হয়।”
স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী আরিফা খাতুন বলেন, আশাশুনি উপজেলার, প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মাপুকুর ইউনিয়নে লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার শিকার এখানকার নারীরা। পানি বাহিত রোগের কারণে নারীদের জরায়ু টিউমার, জরায়ু ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগতে হয় এখানকার নারীদের।
স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ দত্ত বলেন, আদমশুমারি অনুযায়ী শ্যামনগরে পুরুষের হার কমে যাচ্ছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের সার্ভাইকাল ক্যানসার হচ্ছে। জরায়ুর বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এখানে পর্যাপ্ত সুপেয় নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে দিনদিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। কাজের অভাবে এ অঞ্চলের পুরুষেরা কাজের জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ইতিমধ্যেই গাবুরাতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষের পথে। টেকসই বেড়িবাঁধ হয়ে গেলে নদী থেকে লবণ পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে। আগের মতো সবুজ শ্যামলে ভরে উঠবে গাবুরা ইউনিয়ন।