• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বাসার নিচে সংঘর্ষ বারান্দায় আচমকা লুটিয়ে পড়ে ছেলে, অতঃপর...


হারুন-অর-রশিদ, ফরিদপুর
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৪, ০৭:৫৩ পিএম
বাসার নিচে সংঘর্ষ বারান্দায় আচমকা লুটিয়ে পড়ে ছেলে, অতঃপর...
বামে যাত্রাবাড়ীর সংঘর্ষ। পাশে শিশু আহাদ। ছবি: প্রতিনিধি

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানী যাত্রাবাড়ীর একটি ভবনের ৮ তলার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয় শিশু আহাদ (৪)। পরে হাসপাতালে মারা যায়। নিষ্পাপ শিশুটির আত্মার শান্তি কামনায় গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গার বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় দোয়া করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বাদ জুম্মা ভাঙ্গার স্থানীয় পুখুরিয়া মুন্সিবাড়ী মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ব্রাম্মণকান্দা মাদ্রাসা ও এতিমখানা, হরুপদিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং পুখুরিয়া রেল স্টেশন জামে মসজিদ ও পুখুরিয়া গ্রামের ৮টি মসজিদে শিশু আহাদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

ঘটনাটি গত ১৯ জুলাই বিকেল চারটার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকায় ঘটে। ১১ তলা বাড়িটির আটতলায় পরিবারসহ থাকেন আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসান। সঙ্গে থাকেন স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে আহাদ (৪)। আবুল হাসানের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।

আহাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার সময় নিজ বাসার বারান্দায় এক পাশে বাবা, আরেক পাশে মা, মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট আবদুল আহাদ। বারান্দা থেকে তিন জোড়া চোখ চলে যায় নিচের দিকে। বাসার নিচে তখন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছে।

এসময় আচমকা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে শিশু আহাদ। বাবা আবুল হাসান ভেবেছিলেন ছেলে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। তাই ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়েই বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় তার। ছেলেটার চোখ, মুখ, মাথা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে ছেলেটি। গুলিটা ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে গেছে।

রক্তাক্ত সন্তানকে কোলে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসেন আবুল হাসান। তাকে দেখে অস্ত্রধারীরা এগিয়ে এসে বাধা দেয়। পরে ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে তারা সরে দাঁড়ান। ছেলেটিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা বলেন, গুলি ছেলেটির মাথার মধ্যে আছে। তবে কোন অবস্থানে আছে, তা বোঝার জন্য সিটিস্ক্যান করতে হবে। তবে সিটিস্ক্যান করতে হলে আইসিইউর যন্ত্রপাতি খুলে ফেলতে হবে। এতে শিশুটির মৃত্যুও হতে পারে। অথচ বাঁচাতে হলে সিটিস্ক্যান করা জরুরি।

আবুল হাসান বলেন, “একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়ে আমার ছেলে চলে গেল। এ নিয়ে আমি আর কী বলব! চেয়েছিলাম, পোস্টমর্টেম না করতে। অতটুকু শরীর যাতে আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। কিন্তু আমাদের সে চেষ্টাও সফল হয়নি।”

নিহত শিশুর চাচা মোখলেসুর রহমান জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরদিন ২০ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহাদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন ২১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে মরদেহটি তারা বুঝে পান।

এরপর অ্যাম্বুলেন্স করে ভাঙ্গার পুখুরিয়া গ্রামে মরদেহ নিয়ে আসা হয়। ওইদিন বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ছেলেটিকে।

মোখলেসুর রহমান অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, “আগে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। শিশু ছেলেটিকে দাফনের মধ্য দিয়েই কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হলো।”

Link copied!