চাষিরা বলছেন, সপ্তাহ দুয়েক আগেও প্রতিমণ ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সাতদিন ধরে সেই দাম কমতে কমতে একেবারে ১০০ টাকার নিচে এসে ঠেকেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি কপি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ টাকায়। আর একমণ কপির দাম নেমেছে ৮০ টাকা অবধি।
এক মাস আগেও যেসব চাষি খেত থেকে ফুলকপি তুলে বিক্রি করেছেন তারা বিঘাপ্রতি লাভ করেছেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ ফুলকপির দাম পড়ে যাওয়ায় এখন প্রতি বিঘায় চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকার বেশি।
দ্য ডেইলি স্টার বাংলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় সবজির বাজার মহাস্থানগড়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফুলকপির দাম এখন কেজিতে দুই টাকা। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা মণ দরে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সাধারণত খুচরা বাজারে ফুলকপি পিস হিসেবেই বিক্রি হয়ে থাকে। তবে পাইকারিতে সেই হিসাব ভিন্ন হয়ে যায। পাইকারি দরের হিসাবে মহাস্থানগড় বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি ফুলকপির দাম পড়ছে সর্বনিম্ন দুই টাকা করে।
তবে এত কম দামে যে ফুলকপি হু হু করে বিক্রি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বরং খেত থেকে উৎপাদিত ফুলকপি তুলে বাজারে নিয়ে এসে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন ফুলকপিচাষিরা। ক্রেতাদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তারপরও দরকষাকষি অনেক বেশি করতে হচ্ছে।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাদিয়াচড়া গ্রামের সবজিচাষি পটল ইসলাম নয় মণ ফুলকপি নিয়ে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) খুব ভোরে মহাস্থান বাজারে আসেন। তবে সকাল ১০টা নাগাদ অপেক্ষা করে হাল ছেড়ে দেন। শেষ অবধি নয় মণ কপি বিক্রি করে দেন ৮০০ টাকায়। পটল ইসলামের ভাষ্য, “ফুলকপি বিক্রির টাকা দিয়ে ভ্যানভাড়া শোধ করলে আর হাতে কিছু থাকবে না।”
একইরকম অভিজ্ঞতা শিবগঞ্জের আরেক চাষি নাজমুল ইসলামের। তার জমিতে লাগানা ফুলকপির প্রতি পিস উৎপাদনে খরচ হয়েছে পাঁচ টাকা করে। অথচ বাজারে এনে সেগুলো বিক্রি করতে হচ্ছে দুই টাকারও কম। লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতি ফুলকপিতে তিন টাকার বেশি। গাবতলী উপজেলার চাষি আব্দুল বাসেদ পাঁচ মণ কপি এনে বিক্রি করেছেন প্রতি মণ দেড়শ টাকা দরে।
তবে শুধু যে ফুলকপির বাজারই এমন ব্যাপারটা তা নয়। বরং বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের অন্য সব সবজির দামভাগ্যও একই রকম। মুলা বিক্রি হচ্ছে তিন টাকা কেজিতে। বাঁধাকপির কেজি পাঁচ টাকা আর কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা কেজিতে।
মহাস্থান বাজারের ‘মা-বাবার দোয়া সবজি ভাণ্ডার’ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আব্দুস সালাম বললেন, দুই টাকায় ফুলকপি কিনে ঢাকায় পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ হচ্ছে ১০ টাকা করে।